দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে ঘুরছেন বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার দক্ষিণ ফতেহপুর গ্রামের মৃত আবুল কালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম। তিনি স্বামীকে হারানোর কিছুদিন পর মেয়েকেও চিরদিনের জন্য হারিয়েছেন। ১৩ টি বছর ধরে স্বামী ও মেয়েকে হারিয়ে চোখের জল ফেলছেন সেলিনা। ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের বারান্দা আর নিত্যনতুন আইনি মারপ্যাঁচ এখন তার সঙ্গী। অল্পকিছু জমিজমার ন্যায্য হিস্যার লড়াই করতে গিয়ে ভিটেমাটি হারানোর উপক্রম সেলিনা (৫৭)।

আদালত প্রাঙ্গণে সেলিনার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার দক্ষিণ ফতেহপুর গ্রামের মৃত আবুল কালামের স্ত্রী সেলিনা। মাত্র সাড়ে চারশতক জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে রহস্যজনকভাবে মারা যান তার স্বামী আবুল কালাম। একই জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় ২০১২ সালের ১৯শে নভেম্বর সকালে খুন হয় মেয়ে সুমনা আক্তার (১৪)। এই ঘটনায় সেলিনা বেগম নিজে বাদী হয়ে বিয়ানীবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় একই এলাকার সমসুল ইসলাম, মখলিছুর রহমান, আব্দুল খালিক, মাসুক আহমদ, সাবিনা ইয়াছমিন ও রিমা বেগমকে আসামি করা হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করলে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এরপর থেকে উচ্চ আদালত দফায় দফায় মামলার বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিতে থাকেন। পুনরায় এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে আসামিপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের কথা বলে ফের সময় নিতে চায়। কিন্তু আদালত তাদের সময় আবেদন না মঞ্জুর করে নির্ধারিত সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

তিনি আরো জানান, তার মেয়ে স্কুলছাত্রী সুমনা বেগম নিহতের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পাল্টা মামলা দায়ের করে আসামিপক্ষ।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট দেলোওয়ার হোসেন দিলু জানান, বিবাদীপক্ষ নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছে। তারা বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে টালবাহানার আশ্রয় নিচ্ছে।

এদিকে সেলিনা বেগম জানান, দীর্ঘসময় থেকে মেয়ে হত্যার বিচারের অপেক্ষায় থেকে তার সর্বস্ব হারানোর উপক্রম। এখনকার সমাজে অর্থ-প্রভাবের কাছে চোখের জল বড় অসহায় বলে চোখ মুহুতে থাকতে তিনি।

তিনি আদালত ও রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানান, যাতে দ্রুত মেয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ন্যায় বিচার করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর সকালে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় সেলিনা বেগমের মেয়ে সুমনা বেগম নিহত হন। এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার থানায় ২০ নভেম্বর সেলিনা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৫, তারিখ- ২০-১১-২০১২ইং। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।