পারভেজ হাসান লাখাই প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার সংলগ্ন সুতাং নদীর ওপর একটি পাকা সেতু না থাকায় ভাটি এলাকার প্রায় ৩৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও এই জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোনো স্থায়ী সেতু নির্মাণ হয়নি। বর্ষা শেষে নদীর পানি কমতে শুরু করায় প্রতি বছরের মতো এবারও বাঁশের ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর ওপর দিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব
দীর্ঘদিন ধরে সেতু না থাকায় এই অঞ্চলের শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
নদীর দুই পাড়েই একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাঁকোটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।
শিক্ষার্থী জাকির খান বলেন, “বাঁশের সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে ভয় লাগে। সরকার যদি আমাদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে ব্রিজটা দ্রুত করে দিতেন।”
সিংহগ্রামের কৃষক সুজন মিয়া জানান, ব্রিজের অভাবে জমি থেকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় বাজারে নিতে কষ্ট হয়। বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে দ্বিগুণ পরিবহন খরচ হয়, ফলে তারা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গোপালপুর গ্রামের একজন অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর আর কেউ তাদের খোঁজ রাখেন না। বহু বছর ধরে স্থানীয়রা সুতাং নদীর ওপর একটি সেতুর স্বপ্ন দেখছেন, যা আজও বাস্তবে রূপ নেয়নি।
এলাকার এই চরম দুর্ভোগের বিষয়ে জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারাও আশানুরূপ কোনো সমাধান দিতে পারেননি।
বুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন চন্দ্র গোপ সৌরভ স্বীকার করেন, এটি ৪-৫টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের চলাচলের জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। তিনি জানান, বিশেষ করে শিশু, শিক্ষার্থী ও নারীরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিগত ৩-৪ বছর আগে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সার্ভে (জরিপ) হলেও কেন এটি আলোর মুখ দেখেনি, তা তিনি জানেন না।
লাখাই উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্মকর্তা এহতেসামুল হক বলেন, “বর্তমানে কোনো বরাদ্দ নেই, তবে খুব তাড়াতাড়ি এরকম প্রজেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।আমরা নতুন করে প্রস্তাব পাঠিয়েছি ।” ৩-৪ বছর আগে সার্ভে হওয়ার পরও কেন সেতুটি নির্মাণ হয়নি— এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি অজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যা এলাকাবাসীর হতাশা আরও বাড়িয়েছে।
জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে জনদুর্ভোগের বিষয়টি অবগত থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে দ্রুত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। লাখাইয়ের ৩৫ গ্রামের মানুষ জরুরি ভিত্তিতে সুতাং নদীর ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।