স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ::
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে পূর্ব বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউপি সদস্য কামরুল ইসলামের ছোট ভাই সেজাব হোসেন ওরফে কালা মিয়া (৩৫) নিহত হয়েছেন। এ হত্যাকান্ডের পর থেকে এলাকায় ভাঙচুর ও লুটপাটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। একে অপরকে দায়ী করায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে জামালগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম ও প্রতিপক্ষ আব্দুল মতিন গ্রæপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে ওই বিরোধের জেরে সংঘর্ষে কালা মিয়া নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী মোছা. সুলেমা খাতুন বাদী হয়ে জামালগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
ঘটনার দিন পুলিশ আসামিপক্ষের চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে মামলার মূল আসামিরা এখনও অধরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহতের স্বজনরা বলছেন, আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং নানা কৌশলে নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। নিহতের পরিবার দাবি করছে-সোফায়েল, জুয়েল, আব্দুল্লাহ ও মতাকাব্বির পরিকল্পিতভাবে কালা মিয়াকে হত্যা করেছে।
নিহতের স্ত্রী মোছা. সুলেমা খাতুন বলেন, “আমি দুই শিশু সন্তান নিয়ে অসহায়। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।” এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর ছয় বছরের ছেলে সাদমানও বাবার খুনিদের ফাঁসি দাবি করে।
ইউপি সদস্য ও নিহতের ভাই কামরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের মামলার আসামিদের এখনও ধরা হয়নি। প্রশাসনের কাছে দাবি, দ্রæত গ্রেফতার করে বিচার নিশ্চিত করা হোক।”
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও নিহতের খালাতো ভাই হাজী ইখতিয়ার উদ্দিন অভিযোগ করেন, “খুনের পর আসামিপক্ষ নিজেদের ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের নামে অপপ্রচার করছে। তারা মালামাল সরিয়ে নিয়ে বলছে আমরা লুট করেছি। একটি প্রভাবশালী চক্র পুরো ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।”
নিহতের স্বজন আশরাফ হোসেন সিদ্দিকী রুপন বলেন, “আমাদের কাছে ভিডিও প্রমাণ আছে যে, তারা নিজেরাই তাদের ঘর থেকে মালামাল সরিয়েছে। অথচ দোষ চাপাচ্ছে আমাদের ওপর। বর্তমানে আমরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। একটি চক্র আসামিদের দিয়ে এই অপপ্রচার করাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ওপর হামলার পরও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে (ফেসবুক ও ফোনে) হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং তাদের অপকর্মের প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। তাই এই কুচক্রী মহলটির কর্মকান্ডবন্ধ করে সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষের নারীরা পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, “আমরা নিরীহ মানুষ। খুনের পর বাদী পক্ষ আমাদের ঘরে হামলা চালিয়েছে, আসবাবপত্র লুট করেছে। আমরা প্রতিদিন আতঙ্কে আছি।”
সেজাব হোসেন (কালা মিয়া) ছিলেন পরিবারের একমাত্র ভরসা। তাঁর দুই শিশু সন্তান এখনও বাবাকে খুঁজে ফেরে। স্ত্রীর আহাজারি আর শিশুদের কান্নায় পরিবারটি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, কালা মিয়ার মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকেই নয়, পুরো গ্রামকে শোকে আচ্ছন্ন করেছে।
এ বিষয়ে জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মূল আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। লুটপাটের অভিযোগও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না।”