সিলেট ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সমালোচনার মুখে আলী আমজদের ঘড়িঘর থেকে সরছে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ
সমালোচনার মুখে আলী আমজদের ঘড়িঘর থেকে সরছে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’

তীব্র সমালোচনার মুখে আলী আমজদের ঘড়িঘর চত্বর থেকে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ সরানো হয়েছে।

 

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের চাঁদনীঘাট এলাকায় গিয়ে ঘড়িঘর চত্বরে নির্মাণাধিন ওই স্মৃতিস্তম্ভ দেখা যায়নি। এটি আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার কয়েকজন।

 

এরআগে গত ২ সেপ্টেম্বর সিলেটের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের বৈঠকে ঘড়িঘর থেকে এই স্থাপনাটি সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

সিলেটের ১৫১ বছরের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজদের ঘড়িঘরে ভেতরে জুলাইয়ের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার অংশবিশেষ আড়াল করে স্মৃতিফলক নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা দেখা দেয়।

 

এই স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা, সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

 

যে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার কারণে সিলেটের মানুষ গর্ব অনুভব করেন, এর একটি হচ্ছে ১৮৭৪ সালে স্থাপিত আলী আমজদের ঘড়ি। আরও কয়েকটি স্থাপনার সঙ্গে এটি ‘সিলেটের প্রতীক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ঘড়িঘরের বেষ্টনীর মধ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে স্মৃতিফলক। এতে ঘড়িঘরের প্রকৃত স্থাপত্যশৈলী আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, এমনটাই দাবি সমালোচনাকারীদের।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে ঘটনাস্থলে কিংবা ঘটনাস্থলের পাশে একই নকশায় ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ নামে স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিলেট নগরে চারজন শহীদের স্মরণে এমন স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ গত জুলাই মাসে শুরু হয় এবং আগস্ট মাসে শেষ হওয়ার কথা। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

 

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্মৃতিফলক নির্মাণের স্থান চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। বিশেষত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শহীদদের শহীদ হওয়ার স্থান দেখিয়ে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আলী আমজদের ঘড়ির সামনে মো. পাবেল আহমদ কামরুল ও পঙ্কজ কুমার কর শহীদ হন। তাই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে দুই শহীদ স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মিত হচ্ছে।

 

এর বাইরে কোর্ট পয়েন্ট মধুবন মার্কেটের সামনে শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষার্থী রুদ্র সেনের স্মরণে ঘটনাস্থলের পাশে স্মৃতিফলক নির্মিত হচ্ছে। প্রতিটি ফলক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৫ টাকা।

 

সিলেট নগরের সুরমা নদীর পাড় আর সারদা হলের মাঝখানে শহরের জিরোপয়েন্ট। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজ পার হয়ে শহরের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এটি ১৮৭৪ সাল থেকে। ওই বছর তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেটে সফরে এসেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Follow for More!