
ঢাকা: দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচন উপলক্ষে এরই মধ্যে সব কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার-ব্যানার, মিছিল-মিটিং আর নানান আয়োজন গতকাল শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় আগেভাগেই নিয়েছে উৎসবের রূপ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর ডাকসুর ভোট ঘিরে তারা ভীষণ উচ্ছ্বসিত। কারণ, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসবে, যা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও সামাজিক পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, প্রচার-প্রচারণা শেষ হলেও প্রচারণার রেশ এখনো টের পাওয়া যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টার। টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন ও হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে বসে আলোচনা করছে আগামীকালের ভোট নিয়ে। কে কোন পদে এগিয়ে, কার সম্ভাবনা বেশি- এসব নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। ক্যান্টিনের আড্ডায়ও মূল আলোচনার বিষয় নির্বাচন। অনেকে আবার ভোটের দিন কীভাবে লাইনে দাঁড়াবেন, কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন এসব নিয়েই সরব।
হলগুলোতে প্রার্থীদের প্রচারণা বন্ধ হলেও চুপ নেই তাদের সমর্থকরা। তারা নিজেদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের একজোট করার চেষ্টা করছেন। তবে প্রচারণা শেষ হওয়ায় এখন সবকিছু অনেকটাই শান্ত, আর সেই শান্ত পরিবেশে লুকিয়ে আছে ভোটপূর্ব উত্তেজনা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ব্যস্ত সময় পার করছে। নির্বাচনী কেন্দ্র ও বুথগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্যদের টহলও বেড়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনে সাংবাদিকদের জন্য খোলা হচ্ছে মিডিয়া সেন্টার
আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, অনেক দিন পর ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। আমরা চাই এই ভোটের মাধ্যমে প্রকৃত ছাত্রনেতারা উঠে আসুক, যারা শিক্ষার্থীদের সমস্যা গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করবে।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, প্রচারণা চলাকালে পুরো ক্যাম্পাসে যে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেটা উপভোগ করেছি। আশা করি, সুষ্ঠুভাবে ভোট হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চার দারুণ দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। অনেক প্রতিশ্রুতি আমরা শুনেছি। এবার দেখতে চাই কে বাস্তবে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারে। তাই আমরা সবাই দায়িত্বশীলভাবে ভোট দেবো।
রুমানা ইসলাম নামের আইন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ডাকসুর নির্বাচন শুধু নেতৃত্ব বাছাই নয়, এটা আমাদের গণতন্ত্র চর্চার একটি অংশ। আমরা চাই এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক।
অন্যদিকে, এরইমধ্যে ভোটের দিন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪। যার মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯।