সিলেট ২১শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

গোয়াইনঘাটে হাজীপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন, হুমকিতে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৭:১১ পূর্বাহ্ণ
গোয়াইনঘাটে হাজীপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন, হুমকিতে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি: গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজিপুর উওর ও দক্ষিণ প্রতাপপুরের পিয়াইন নদী সংগ্লগন এলাকা থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে। দিনে রাতে দেদারসে ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে  অবৈধভাবে নৌকা যোগে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উওোলন করায় নদী পাড়ের শত শত বিঘা ফসলী জমি বাড়িঘর হুমকিতে পড়েছে। উপজেলার হাজিপুর এলাকার উওর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর এবং আমবাড়ি এলাকায় পিয়াইন নদীতে চলছে অবৈধ এ কর্মযজ্ঞ।

অবৈধভাবে বালু লুটের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। তেমনি ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে দেদারসে বালু উওোলনের ফলে  বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।স্থানীয়রা অবৈধভাবে বালু উওোলনের  নৌকা ও ড্রেজার বন্ধে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

অভিযোগ উঠেছে,গোয়াইনঘাট থানার স্থানীয় ইউনিয়নে দায়িত্বরত বিট পুলিশ অফিসারদের ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে বালু লুট। এছাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী সদর ইউনিয়নের আমবাড়ি এলাকায়ও ইজারা বহির্ভূত পিয়াইন নদী থেকেও বালু লুট করছে আরেকটি চক্র।

সরেজমিন গিয়ে খুঁজ নিয়ে  জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজিপুর এলাকার উওর প্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর এলাকার পিয়াইন নদী ও সদর ইউনিয়নের কইন্না খাল থেকে প্রতিদিন দিনে রাতে অন্তত অর্ধশত নৌকা যোগে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উওোলন করছে স্থানীয় কিছু প্রবাভশালী চক্র। প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উওোলন করছে চক্রটি। যার বাজার মূল্য অন্তত এক কোটি টাকা। গত দুই মাস ধরে অবাধে বালু লুট করে বিক্রি করছে ওই চক্রটি।রীতিমতো অ/স্ত্রে স্বজ্জিত ক্যাডার বাহীনীর পাহাড়ায় দিনে রাতে অবাধে চলে বালু উওোলন।ভয়ে  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, অবাধে অবৈধভাবে বালু উওোলন খেকো চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয়  ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ নেতৃত্বে আরোও কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। এই চক্রটি দিনে রাতে বালু উওোলনে এ অবৈধ কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে।অবাধে বালু তুলার কারণে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার উওর প্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর, লুনীর কইন্না খালের তীরবর্তী শীতকালীন সবজি চাষের ফসলি জমি।

তবে বালু লুটপাটের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ। তিনি প্রতিবেদককে বলেন,হাজিপুর এলাকার উওর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর এলাকায় দিনে রাত বালু লুট হচ্ছে এটা সত্য। তবে বালু লুটপাটে আমি জড়িত নয়।যারা আমার নাম বলছে তারা দুশমনি করে বলছে। আমি এখন সিলেট শহরে আছি সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পারেন দিনে রাতে ওইসব এলাকায় বালু লুটপাট হচ্ছে।

এদিকে উওর প্রতাপপুর ও দক্ষিণ প্রতাপপুর গ্রামের নদীর তীরবর্তী দুপারের বাসিন্দারা জানান, গত দুই মাস ধরে বালুখেকো চক্রটি  দিনে রাতে বার্কি নৌকা ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উওোলন করছে।ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উওোলনের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও নদীর সাইটের শীতকালীন সবজি চাষের ফসলী জমি। ফলে নদীর তীরে বসবাস ক্রমাগত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানান তারা।অবৈধভাবে বালু উওোলন বন্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মামলা হামলার শিকার হতে হচ্ছে  বলে জানিয়েছেন তারা। এমন কি বালু লুটপাট কারী প্রভাবশালী চক্রটির ভয়ে নাম ও  প্রকাশ করতে পারছেন না স্থানীয়রা।

অপরদিকে,একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ১২ নং সদর ইউনিয়নের আমবাড়ী এলাকায় পিয়াইন নদীতে রাতে ১০ থেকে ১৫ টি ড্রেজার গত দুই সপ্তাহ  ধরে অবৈধভাবে বালু উওোলন করছে অপর একটি চক্র।স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের  নেতৃত্বে  কয়েক জন কে নিয়ে ইজারা বহির্ভূত জায়গা  থেকে  অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উওোলন হচ্ছে।ফলে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো।এসব গ্রামের বাসিন্দারা নদী গর্ভে ঘর বাড়ি  বিলীন হওয়ার আতংকে আছেন।

গোয়াইনঘাট ১২ নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সুমন বলেন সদর ইউনিয়নের অধীনস্থ আমবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উওোলন বন্ধ সামাজিক ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি।কাজ না হওয়াতে পরিষদের মাসিক জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত একমত হয়েছি যে ইউনিয়নের ভিতরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উওোলন করা যাবে না।

চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সুমন আরোও বলেন,আমার পরিষদ ও আমরা সবসময় অন্যায় ও দুর্নীতি  বিপক্ষে।মৌখিকভাবে প্রতিবাদ,করে কাজ না হওয়াতে পরিষদের জরুরি সভা ডেকে ৯ সদস্যর স্বাক্ষরিত ঐক্যমতে সিদ্ধান্ত হয়েছে  ড্রেজার মেশিন দিয়ে  আমাদের ইউনিয়নে  বালু উওোলন করা যাবে না। যারা এটি করছে পরিষদের পক্ষ থেকে  তাদের বিরুদ্ধে  আইনগত ব্যবস্থা নিতে  সংশ্লিষ্ট দফতরে আজকেই অনুলিপি প্রেরন করা হবে। আপনার পরিষদের  দেলোয়ার হোসেন নামে একজন ইউপি সদস্য এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে  জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তি দায়ভার পরিষদ নেবে না সে যেই হোক না কেন।

গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, কোনভাবেই অবৈধভাবে বালু উওোলন করতে দেওয়া হবে না।পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে কেউ যদি অবৈধভাবে বালু উওোলন করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান তিনি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন,ওই জায়গা ইজারা হয় নাই।বালু উওোলনের  খবর পেলেই পুলিশ নিয়ে অভিযানে যাই।খুঁজ নিয়ে দেখেন  গতকাল থকে ওই যায়গায় বালু উওোলন বন্ধ আছে একে বারেই সিল করা আছে।এছাড়া আমি প্রতিনিয়ত খবর রাখছি। এরপরও যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উওোলন করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে অবৈধভাবে বালু উওোলন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন