সিলেট ১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সিলেট ৪-আসনে দলীয় মনোনয়ন: চমক দেখাতে পারেন শেখ সাদেক আহমদ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০১:০৯ অপরাহ্ণ
সিলেট ৪-আসনে দলীয় মনোনয়ন: চমক দেখাতে পারেন শেখ সাদেক আহমদ

নিজস্ব সংবাদদাতা:: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো তফশিল ঘোষণা না হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণার পরপরই 

সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) গঠিত এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ আসন থেকে বিএনপির সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। কে হচ্ছেন এই আসে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী।

 

এ আসন থেকে বিএনপির এমপি প্রার্থী হতে চান শেখ সাদেক আহমদ ।

রাজনীতিক, সংগঠক ও সমাজসেবক। জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং চিকনাগুল  ইউনিয়নের কৃতি সন্তান। ছাত্রজীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন বিএনপির রাজনীতিতে। সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন স্তরে।

 

শেখ সাদেক আহমদ বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি  ছাত্রদলের বিভিন্ন পদে ছিলেন। ২০১০ সালে রাজনৈতিক মামলার কারণে দেশত্যাগে বাধ্য হন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে যুক্তরাজ্য ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে লন্ডন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আরাফাত রহমান খোকা মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য এবং অনলাইন নিউজমাধ্যম সংগ্রাম টিভির প্রধান নির্বাহী সম্পাদক।

 

রাজনীতিকে মানবতার সেবায় নিবেদিত ব্রত হিসেবে দেখেন শেখ সাদেক আহমদ । জৈন্তাপুরের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন। দল সুযোগ দিলে অংশ নেবেন জাতীয় নির্বাচনে। বিপুল ভোটে জিতে আসনটি উপহার দিতে চান নেতা তারেক রহমানকে।

 

সম্প্রতি গণমাধ্যমে  দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন নিজের রাজনৈতিক যাত্রা, দলীয় আদর্শ, আন্দোলনের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান সংকট নিরসনে তার ভাবনা ও প্রস্তাবনা।

 

 

বিএনপির বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না:

 

তরুণ সাবেক এই ছাত্রনেতা  বলেন, ‘টানা ১৭ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়ন, নির্যাতন ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের নিত্যসঙ্গী। তবে জনগণের আন্দোলন ও গণচেতনার জোয়ারে আজ স্বৈরশাসনের পরাজয় হয়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের গণজাগরণ ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা দেশের জনগণের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন। এখন পুরো জাতি আগ্রহভরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশায় রয়েছে।’

 

শেখ সাদেক আহমদ   দাবি করেন— লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার একটি ইতিবাচক সমাধান এসেছে। সম্ভাব্যভাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

 

শেখ সাদেক আহমদ  বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভোটাররা যদি নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র না হয়, তাহলে বিএনপির বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

 

দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে জনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়িয়ে তারেক রহমানের নির্দেশনার আলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় স্বার্থে কাজ করতে হবে।’

 

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন জাতির আকাঙ্ক্ষা:

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, স্বনির্ভর ও আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামীর  রাষ্ট্রনায়ক, তারুণ্যের অহংকার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এখন সময়ের দাবি এবং জাতির গভীর আকাঙ্ক্ষা।’

 

শেখ সাদেক আহমদ  বলেন, ‘তার নেতৃত্বেই তৃণমূলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, ত্যাগ, শক্তি ও মেধা দিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।’

 

গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিএনপি:

 

শেখ সাদেক আহমদ আরও বলেন, ‘বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি দেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই দল প্রতিষ্ঠা করেছেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।’

 

তিনি বলেন, ‘দল প্রতিষ্ঠার পর শহীদ জিয়া প্রবর্তিত ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।’

 

শেখ সাদেক আহমদ  আরও বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি যে ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

 

ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত:

 

ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হই। সেই থেকে বিএনপির আদর্শ ও সংগ্রামের সঙ্গেই আমার পথচলা।’

 

তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। সিলেট জেলা , বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাবেক এমপি  মরহুম দিলদার হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে রাজপথের প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রভাগে ছিলাম।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও হয়রানিকে কখনো পরোয়া করিনি। ভবিষ্যতেও দেশের জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেন্দ্র ঘোষিত যেকোনো আন্দোলনে সক্রিয় থাকবো। প্রয়োজনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত আছি।’

 

রাজপথের সৈনিক:

 

আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে শেখ সাদেক  বলেন, ‘১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের পক্ষে রাজপথে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করি। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা আমার রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়।’

 

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে নিজ উপজেলায় ছাত্রদলকে সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। দেশের সংকটময় প্রতিটি মুহূর্তে আমি নিজেকে আত্মনিবেদিত করে দলের প্রতি সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কখনো পিছপা হইনি।’

 

 

তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজপথে:

 

২০০৭ সালের রাজনৈতিক সংকটকালীন সময়ে রাজপথের ভূমিকা স্মরণ করে শেখ সাদেক আহমদ  বলেন, ‘২০০৭ সালের ২৫ আগস্ট তারুণ্যের অহংকার  তারেক রহমান মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (তৎকালীন পিজি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে সিলেট বিএনপির ডাকা বিভিন্ন বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদলের ব্যানারে  অংশ নেই।’

 

তিনি বলেন, ‘২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আমরা মিছিল করি। গণতন্ত্র রক্ষার সে আন্দোলনে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমি রাজপথে সক্রিয় ছিলাম।’

 

তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচিতে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং দলের নেতা-কর্মীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে আন্দোলনকে বেগবান করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।

 

 

শহীদ জিয়ার আদর্শে দলকে সুসংগঠিত করার অঙ্গীকার:

 

তিনি বলেন, ‘আমৃত্যু মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীরউত্তম) এর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সিলেটসহ আমার প্রিয় জন্মভূমি জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট, ও কোম্পানীগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণের পাশে থেকে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

 

 

মানবসেবাই রাজনীতির মূল ব্রত

 

শেখ সাদেক আহমদ  আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘পৃথিবীতে মানবসেবার উপরে কোনো ধর্ম নেই। তাই মানবতার কল্যাণে নিজেকে সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্যেই আমি রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছি।’

 

তিনি বলেন, ‘ সিলেট ৪ আসেন দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কোনো প্রার্থী না থাকায় এই আসনের কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি এবং তৃণমূল নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পায়নি। এই আসনটি বিএনপির  ঘাটি হিসেবে পরিচিত রয়েছে। দল আমাকে মূল্যায়ন করলে আমি এই আসনটি আগামী রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে উপহার দিতে চাই। আমার  নির্বাচনী এলাকার ৩টি উপজেলার  মানুষের সুখ-দুঃখের পাশে দাঁড়ানোই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে নিজেকে ধন্য মনে করি।’

 

আগামীর পথচলায় সকলের দোয়া ও ভালবাসা প্রত্যাশী তিনি বলেন, ‘সবার সহযোগিতা ও দোয়া পেলে আরো বেশি ভালো কাজ করতে পারবো।’

 

লন্ডনে প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়-শেখ সাদেক দেশনায়ক তারেক রহমানের আস্থাভাজন একজন দৃঢ় ব্যক্তিত্ব। বিএনপির দুঃসময়ের প্রতিটি কর্মসূচি, আন্দোলন ও প্রোগ্রামে তার দৃশ্যমান উপস্থিতি তাকে করে তুলেছে ভিন্নধারার একজন নেতা।

তার অনুসারীরা মনে করছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা হতে পারেন সিলেট চার আসেনর আগামী দিনের কান্ডারী।

সংবাদটি শেয়ার করুন