
মফিজুর রহমান নাহিদ স্টাফ রিপোর্টার:-সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ এনেছে লোভাছড়া লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন। তারা বলছে, শ্রমিকদের অধিকার নস্যাৎ করে একটি চক্র নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে রাজস্ব খাতেও চলছে অনিয়ম ও লুটপাট।
বুধবার( ৬ আগস্ট) সিলেট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মোঃ আখতার হোসেন জানান, শ্রম অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক শাখা থেকে নিবন্ধিত এই ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক স্বার্থে কাজ করছে। কিন্তু সম্প্রতি লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে শ্রমিকদের বাদ দিয়ে নানা প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এতে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান, মজুরি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
সম্মেলনে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন নেতারা। দাবির মধ্যে রয়েছেঃ নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রম আদালতের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, প্রযুক্তির কারণে শ্রম হ্রাস পাওয়ায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে প্রদান, প্রতি ইঞ্চি থেকে আত্মসাৎকৃত প্রায় ৩০ লাখ টাকা ফেরত, জব্দ করা নৌকা শ্রমিকদের মাঝে ফেরত প্রদান, উপকমিটির নির্বাহী সদস্য ইউএনও, এসিল্যান্ড ও তহসিলদারকে প্রত্যাহার, শ্রমনীতি বাস্তবায়নে প্রশাসনের সহযোগিতা, ফেলুটার এক্সক্যাভেটর স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং আত্মসাৎ হওয়া ৭ কোটি টাকা উদ্ধারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ।
নেতারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন কোয়ারি বন্ধ থাকায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। সরকারের নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া জব্দকৃত পাথর অপসারণে শ্রমিকদের কাজের সুযোগ তৈরি হলেও বাস্তবে তারা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। ২৫ মে পাথর অপসারণ শুরু হলেও শ্রমিকদের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। এরপর ৩ জুন মূলাগুল নয়াবাজারে শ্রমিকদের কাজ না দেওয়া, ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত রাখা ও বারকি নৌকা থেকে অবৈধ রয়েলটি আদায়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন।
তারা জানান, পাথর অপসারণে সরকার ৪৫ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করলেও শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। শ্রমিকদের অধিকার ও মজুরি নিশ্চিত করতে ১৫ জুন ব্যবসায়ী সমিতিকে চিঠি দিলে ২৫ জুন আলোচনা নির্ধারিত হয়। কিন্তু তার দুই দিন আগেই কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এম তমিজ উদ্দীনের সন্ত্রাসী বাহিনী হুমকি দিয়ে আলোচনা বানচাল করে দেয়। পরে ১৭ জুলাই থানায় আখতার হোসেন বাদী হয়ে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শ্রমিক নেতারা আরও অভিযোগ করেন, গত ৩১ জুলাই ভালুকমারা ঘাট এলাকায় জনৈক সাইফুল আলমের পাথরবাহী বলগেটে এম তমিজ উদ্দীনের নেতৃত্বে ১২০ থেকে ১৩০ জন সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় শ্রমিক সুলতান, শহীদ ও সালমানকে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। এরপরও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ও সদস্য সালমান আহমদ উপস্থিত ছিলেন। তারা দ্রুত সমস্যা সমাধান এবং প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ দাবি করেন।