
ডেস্ক নিউজ : বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশি নিউ ইয়র্ক পুলিশ অফিসার নিহত দিদারুল ইসলামের শেষ যাত্রা ছিল হৃদয়বিদারক ও আবেগঘন। ব্রঙ্কস পাড়ায় বৃষ্টির মধ্যেই দিদারুল ইসলামের কফিন নিয়ে বের হয়েছিল পুলিশ কর্মকর্তারা, এবং সেসময় তার প্রতি সম্মান জানাতে হাজার হাজার পুলিশ সদস্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সালাম জানান।

৩৬ বছর বয়সী দিদারুল ইসলামকে সোমবার মিডটাউন ম্যানহাটনে এক গণহত্যার ঘটনায় নির্মমভাবে টার্গেট করে মারা হয়। তার মৃত্যু বাংলাদেশের মানুষ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক গভীর শোকের উপলক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। তবে নিউইয়র্ক প্রশাসন তাকে যে সম্মান দেখিয়েছে তাতে বাংলাদেশি হিসেবে আজ আমরা সত্যিই গর্বিত। লক্ষ লক্ষ মানুষ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই দিদারুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানাতে তার জানাজায় অংশ নিতে রাস্তায় নেমে পড়েন এদিন। হেলিকপ্টার এর পাশাপাশি সমগ্র শহরে গাড়িবহরে শো ডাউন এরপর জানাজায় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই স্যালুটের পর স্যালুট।

বৃষ্টির মধ্যে যখন দিদারুল ইসলামের কফিন তার নিজ এলাকার মসজিদ, পার্কচেস্টার জামে মসজিদ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সেখানকার দৃশ্য ছিল একেবারে হৃদয়বিদারক। হাজার হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে শোক প্রকাশ করেন। সাধারণ আমপাবলিকের ভিড় সামলাতেও এদিন বেশ হিমশিম খেতে হয় আমেরিকান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

মৃত্যুর পর, দিদারুল ইসলামকে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে মরণোত্তর ডিটেকটিভ প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়, যা তার কঠোর পরিশ্রম ও দায়িত্ববোধের প্রতি যথাযথ সম্মান ছিল। তার সহকর্মীরা এ বিষয়ে বলেন, “তিনি ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য কর্মকর্তা, যিনি সবসময় তার সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন।”

নিউ ইয়র্ক পুলিশ এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে বারবার স্যালুট জানান। হেলিকপ্টারগুলি আকাশে উড়ে যায়, এবং শোকবিহীন এই দৃশ্যটি তার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রকাশের একটি চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকবে।

সর্বদা তার পরিবার ও নিউইয়র্ক শহরের প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন দিদারুল, যিনি পৃথিবীতে রেখে গেছেন তার অন্তসত্ত্বা স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে। তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় তার সহকর্মীরাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

বৃহস্পতিবারের এই শোকসভার সময়, নিউ ইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ আবেগঘন ভাষণে রীতিমতো দিদারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশিদের প্রশংসা করে বলেন, “দিদারুল ইসলাম, যিনি বাংলাদেশের একজন গর্বিত সন্তান, আমাদের শহরের সেবা করেছিলেন। তার পরিশ্রম, নির্ভীকতা এবং নিষ্ঠা কোনোদিন ভুলে যাওয়া যাবে না। তিনি আমেরিকান স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।”

ফয়সোল আহমেদ, একজন কমিউনিটি নেতা, তিনি বলেন, “দিদারুল ইসলাম আমাদের শহরের গর্ব। তিনি ছিলেন আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের উদাহরণ। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, কিন্তু তার কাজ, তার জীবন, তার মূল্যবোধ আমাদের প্রেরণা দেবে।”
এছাড়া, ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি দিদারুল ইসলামের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে পার্কচেস্টার জামে মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। দিদারুল ইসলামের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীরা তার অনুপস্থিতিতে গভীরভাবে শোকাহত। তার মৃত্যু শুধুমাত্র তার পরিবার নয়, বরং পুরো নিউ ইয়র্ক শহরের জন্য এক অম্লান ক্ষতি। তবে তিনি যেভাবে নিজের জীবন বাজি রেখে বীরত্বের সাথে শত্রুদের সঙ্গে লড়ে শহীদ হয়েছেন তাতে করে নিউইয়র্কবাসী তাকে ভুলতে পারবে না কখনোই। আমেরিকার চির স্বরণে থাকবে এক বাংলাদেশি দিদারুলের নাম। যিনি সত্যিই নিজের জীবন দিয়ে আজ বাংলাদেশিদের গর্বিত করলেন বিশ্বের বুকে।

তার এই দৃঢ়তার, নিষ্ঠা এবং ভালোবাসার স্মৃতির সঙ্গে নতুন প্রজন্ম শিক্ষা নেবে এবং তার অর্জনগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে। এটি নিউ ইয়র্কের ইতিহাসের একটি অম্লান মুহূর্ত, যেখানে হাজার হাজার পুলিশ কর্মকর্তা এবং নিউ ইয়র্কবাসী একত্রিত হয়ে শহরের একজন প্রাণবন্ত অভিভাবককে শেষ বিদায় জানালেন, যা আগে কখনোই দেখা যায়নি। বিরল এই সম্মান পদর্শনে গর্বে গর্বিত করলেন বাংলাদেশিদেরও।
দৈনিক ইনকিলাব: ১ আগস্ট ২০২৫