
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সেপটিক ট্যাংকে নেমে প্রাণ গেল আপন দুই ভাইসহ চার তরুণের। মোবাইল ফোন তুলতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে তারা একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় আহত আরও দুজনের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় একজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের হরিণছড়া চা বাগানে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত চারজনই হরিণছড়া চা বাগানের চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান। তারা হলেন-রানা নায়েক (১৭)তার বড় ভাই শ্রাবণ নায়েক (১৯) প্রতিবেশী কৃষ্ণ রবিদাস (২০) ও নিপেন ফুলমালি (২৭)।
আহতরা হলেন-রবি বুনার্জী (২০) এবং সঞ্জয়। তাদের মধ্যে রবি বুনার্জীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, ট্যাংকের ভেতরে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম। ‘‘তিনি জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছেন, ১০-১২ ফুট গভীর সেপটিক ট্যাংকে মোবাইল ফোন পড়ার পর সেটি তুলতে গিয়ে একজন একজন করে ট্যাংকে নামেন এবং বিষাক্ত গ্যাসে অচেতন হয়ে পড়েন এবং দু’জন আহত হন।’
স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য অজয় ভৌমিক জানান, ‘‘রানা নায়েক টয়লেটে গেলে অসাবধানতাবশত তার মোবাইল ফোনটি সেপটিক ট্যাংকে পড়ে যায়। পরে সে ফোনটি তুলতে নিচে নামলে মুহূর্তেই অচেতন হয়ে পড়ে। ভাইকে বাঁচাতে বড় ভাই শ্রাবণ নায়েকও ট্যাংকে নামেন, তিনিও একই পরিণতি বরণ করেন। এরপর আরও দুই তরুণ তাদের উদ্ধারে নামলে তারাও মৃত্যুর ফাঁদে পা দেন।”
স্থানীয়রা অচেতনদের উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সব্যসাচী পাল তমাল জানান, “রাতে যাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তারা সবাই আগেই মারা গিয়েছিলেন। পরে আহত রবি বুনার্জীকে চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে পাঠানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, “স্বজনদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা সেপটিক ট্যাংকে নেমেছিল। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে হৃদয়বিদারক আহাজারি। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো হরিণছড়া চা বাগান এলাকায়।