
ডেস্ক নিউজ : সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নের জালালনগর এলাকায় প্রবাসী প্রতিবেশী আজিজুর রহমানের দীর্ঘদিনের নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার ( ৪ জুলাই) সকাল ১০টায় জহিরিয়া মোম্বাউল উলুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও এলাকাবাসীর আয়োজনে তামাবিল মহাসড়কের বটেশ্বর জালাল নগর রাস্তার সম্মুখে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন জহিরিয়া মোম্বাউল উলুম উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গোকুল চন্দ্র নাথ। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি মানববন্ধন পরবর্তী সাংবাদিকদের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সম্মানিত এলাকাবাসী, মুরব্বিয়ান, ছাত্র ফোরাম, সহপাঠী ও জনপ্রতিনিধিগণ, আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। একজন প্রতিবেশী দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমাদের পরিবারকে অমানবিকভাবে হয়রানি করে আসছেন। আমার কষ্টের কথাগুলো আজ প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি এজন্য কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও জানান, ২০১৫ সাল থেকে আজিজুর রহমান নামের এক প্রবাসী ব্যক্তি, যিনি নিজেকে ব্যারিস্টার দাবি করেন, আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা করেছেন। তার প্রতিবেশী কেতকী চন্দ্র নাথ ও আমার পরিবার বিশেষ করে আমার ৭৩ বছর বয়সী অসুস্থ, অবসরপ্রাপ্ত পিতা প্রতিটি মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। বারবার আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আমরা আজ নিঃস্ব প্রায়। এমনকি আমাদের বসতভিটার পাশ দিয়ে প্রবাহিত সরকারি রাস্তা, যা আমাদের একমাত্র চলাচলের পথ, সেটিকেও দখলের চেষ্টা করেছেন।
আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশে খাল খনন, মাটি ভরাট করে বাঁধ সৃষ্টি, পুকুর কাটা এসব করে বৃষ্টির পানি আটকে দিয়ে আমাদের বাড়িতে জলাবদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে। একের পর এক মিথ্যা মামলা, জিডি, অভিযোগ সব কিছুই আদালতে খারিজ হয়েছে, কিন্তু হয়রানি থামেনি।
গোকুল চন্দ্র নাথ বলেন, প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী মহলের ছায়াতলে থেকে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ কারো কথার তোয়াক্কা করে না। আমরা তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছি। আমার একটাই দাবি এই নিপীড়নের অবসান হোক, প্রশাসন যেন আমাদের রক্ষা করে।
মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম আজাদ বলেন, স্থানীয়ভাবে বহুবার বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ কোনো সমঝোতা চায়নি। একজন শিক্ষকের এমন দুর্দশা মেনে নেওয়া যায় না। ভুক্তভোগী শিক্ষক ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতে অভিযোগ দিয়েছেন শীঘ্রই দুন পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করব।

সাবেক মেম্বার নিজাম উদ্দীন, ছাত্র ফোরামের সভাপতি কয়েছ আহমদ, ও সদস্য আয়ুব আলী সজিব বলেন, আমরা এলাকাবাসী, প্রাক্তন ছাত্র ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, গোকুল স্যার ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে অবিচারের শিকার। আমরা একজোট হয়ে প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা দাবি করছি।
সিলেট জজকোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সমীর উদ্দিন বলেন, “মামলাগুলোর ধরন, সংখ্যা ও পরিণতি দেখলেই বোঝা যায় এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন সম্মানিত শিক্ষক এভাবে লাঞ্ছনার শিকার হবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।
অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ বলেন, “শিক্ষক মানেজের বাতিঘর। গোকুল স্যারের মতো একজন শিক্ষকিরুদ্ধ চরিতার্থ করতে গিয়ে তার পরিবারকে বছরের পর বছর হয়রানি করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও অন্যায়।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন ফোরামের সিনিয়র সভাপতি আলাউদ্দিন আলাল, সেক্রেটারি লিয়াকত আলী মিঠু, সাবেক মেম্বার, মেম্বার সাইদুর রহমান এনাম,ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফয়জুল হক, ক্রীড়ামোদী ফয়েজ আহমেদ, ব্যবসায়ী আকবর আলীসহ এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অসংখ্য প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, এলাকার মুরব্বিয়ানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
সকলে একবাক্যে বলেন গোকুল স্যারের চোখের পানি বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। প্রশাসনের কাছে তাদের একটাই দাবি অবিলম্বে হয়রানির অবসান ঘটিয়ে শিক্ষক পরিবারটির নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ কারীদের হাতে সাবেক ,পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সিকিকের মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী ও সিলেটের পুলিশ ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে অভিযুক্ত প্রবাসী আজিজুর রহমানে ছবি সংযুক্ত করা প্লে কার্ড হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশীদ বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। পরিদর্শন শেষে তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও’র কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে উভয় পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকা হবে।
এলাকাবাসীরা জানান, আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে তারা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।