
জাহিদুল ইসলাম ::জৈন্তাপুর( সিলেট) প্রতিনিধি ::
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের জনগণ দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে অবশেষে সরাসরি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী “চিকনাগুল বাজার” রক্ষায় তাঁরা একযোগে আবেদন করেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক, সিলেট বরাবর। গত ২৬ জুন ২০২৫, বুধবার, এই গণস্বাক্ষরিত আবেদনপত্র দুই দপ্তরে একযোগে জমা দেওয়া হয়।
আবেদনে জানানো হয়, পানিছড়া মৌজায় অবস্থিত চিকনাগুল বাজারটি ব্রিটিশ আমল থেকেই চালু রয়েছে এবং এলাকাবাসীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। পাক সেটেলমেন্ট জরিপ অনুযায়ী বাজারের নিজস্ব ভূমি সরকারিভাবে ‘হাট’ শ্রেণিতে রেকর্ড করা ছিল।
বিশেষ করে- এস.এ ১নং খতিয়ানের ১৭নং দাগে ০.৬১০০ একর, এস.এ ৬১নং খতিয়ানের ১৭৮নং দাগে ০.৩৫০০ একর, এবং এস.এ ২৩, ২৪ ও ৪৮ নং দাগে ০.৭৭০০ একর ভূমি ‘রাস্তা’ হিসেবে রেকর্ডভুক্ত ছিল। এইভাবে মোট ১.৭৩০০ একর ভূমি সরকারিভাবে বাজার ও রাস্তা হিসেবে গেজেট আকারে প্রকাশিত ছিল।
তবে পরবর্তীতে হাবিব নগর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বাজার স্থাপনে আপত্তি জানালে বাজারটি স্থানান্তর হয়ে জে.এল ৩৩২ /১৫৫ এর বিভিন্ন দাগে পরিচালিত হতে থাকে। নতুনভাবে পরিচালিত এই বাজার সরজমিনে ভূমিগুলোর মধ্যে আংশিক দোকান’ শ্রেণিতে হাবিব নগর চা বাগানের ১ বাই ২নং খতিয়ান ভুক্ত করে রেকর্ড করা হয়েছে এবং পূর্বের ১ নং সরকারি রেকর্ডকৃত বাজারের জমিগুলো চা-বাগানের খতিয়ানে স্থানান্তরিত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ঐতিহ্যবাহী চিকনাগুল বাজাররে নিজস্ব রেকর্ডয়ী ভূমির অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এবং সরকারও গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেবন আবেদন কারীদের ভাষ্য।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মামলা নং ২৮/২০২৪-২৫-এর প্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি), জৈন্তাপুর কর্তৃক চা বাগানের ভূমি পুনরায় ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় দুইটি সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করা হয়। ১. পুরাতন এস.এ রেকর্ডভুক্ত বাজার ও রাস্তার জমি পুনরায় সরকারিভাবে রেকর্ড করে গেজেট প্রকাশ। ২. অথবা, হাবিব নগর ও খাঁন চা-বাগানের আওতায় থাকা জে.এল ৩৩২/১৫৫, এর ১৫৬, ১৫৮, ১৬০, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৬, ১৬৮, ১৭০, ১৭১ ও ১৭২ নম্বর দাগ থেকে ৪.৮২ একর ভূমি ‘হাট’ শ্রেণিতে রেকর্ড করে ৬নং রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা।
আবেদনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে, এস.এ ১ ও ৬১ নম্বর খতিয়ানের কপি,এস.এ ও বি.এস এ খতিয়ানের কপি ও এসএ ও বিএসএ নকশা,কপি।
ঈদ উপলক্ষে পশুর হাট ইজারা বিজ্ঞপ্তি,এবং ৪৩,৭০৫৮৫ টাকার ব্যাংক ড্রাফটসহ মোট ১১টি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যেগুলোর মাধ্যমে বাজারের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই আবেদনপত্রে প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন বাসীর পক্ষে সব মিলিয়ে ১২১ জনের গণস্বাক্ষরে ঐতিহাসিক এই আবেদনটি প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করা হয়।
এই আবেদনর কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুলিপি আকারে প্রদান করা হয়েছে।
চিকনাগুল বাজারের ঐতিহ্য ও বৈধতা রক্ষা, জনস্বার্থ সংরক্ষণ এবং সরকারি রাজস্ব আয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিই এখন এলাকাবাসীর সর্বাধিক প্রত্যাশা।