নিজস্ব সংবাদদাতা::
সিলেটের জৈন্তাপুরে ৪৮ বিজিবির আয়োজনে মাদকবিরোধী জনসচেতনতামূলক সভায় স্থানীয়ভাবে আলোচিত দু’জন ব্যক্তির উপস্থিতি ঘিরে কিছু বিতর্ক দেখা দিলেও বিজিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি ছিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং তাদের অজ্ঞাতসারে ঘটেছে।
গত ২৫ জুন (বুধবার) ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে জৈন্তাপুর উপজেলার রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ স্কুল ও কলেজ অডিটোরিয়ামে সচেতনতামূলক এই সভার আয়োজন করে ৪৮ বিজিবি।
সভাটি ছিল উন্মুক্ত এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণের জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি ক্যাম্প লুটপাট মামলায় জামিনপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি আব্দুল জব্বার এবং জাফলংয়ে বিজিবির নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে আলোচনা শুরু হয়।
তবে ৪৮ বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং তাদের অতীত কর্মকাণ্ড বিজিবির অজানা ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, “বিতর্কিত কারো উপস্থিতি ইচ্ছাকৃত নয়। ক্যাম্প কমান্ডার সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠান পরিচালনার কিছু আনুষঙ্গিক কাজে (যেমন চেয়ার-টেবিল স্থাপন, মঞ্চসজ্জা) স্থানীয় সহায়তা নেওয়া হয়। এ সময় আব্দুল জব্বার এসব কাজে এগিয়ে এলে, ক্যাম্প কমান্ডার তার অতীত সম্পর্কে না জেনে তাকে দায়িত্ব দেন।”
তিনি বলেন, “অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ের সময় জব্বার সৌজন্য সাক্ষাতে এগিয়ে আসেন। আমি স্বাভাবিক সৌজন্যতা রক্ষা করে তাকে ধন্যবাদ জানাই। পরে আমরা জানতে পারি, সে একটি মামলায় জামিনে আছে। বিষয়টি পূর্বে জানা থাকলে আমরা আরও সতর্ক হতাম। এটি অনিচ্ছাকৃত, অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক একটি ঘটনা। ভবিষ্যতে আমরা এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকবো।”
অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল জব্বার শুধুমাত্র মঞ্চসজ্জা ও চেয়ার-টেবিল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। স্থানীয়ভাবেও নিশ্চিত করা হয়েছে, ক্যাম্প কমান্ডার নতুন হওয়ায় তিনি জব্বারের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
এদিকে, একটি ছবিকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ওই ছবিতে দেখা যায়, জব্বার মাস্ক পরে একটি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। উল্লেখ্য, সেটিই ছিল অতিথিদের প্রবেশপথ এবং অনুষ্ঠান চলাকালেই ছবিটি তোলা হয়।
এই প্রসঙ্গে ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হক আরও বলেন, “কোনো ছবি বা তথ্য নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে সংবাদ প্রকাশের আগে বিজিবির কাছ থেকে তা নিশ্চিত হওয়া ভালো। এতে করে তথ্য বিভ্রান্তি এড়ানো সম্ভব হয় এবং জনমনে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। বিজিবি সব সময় সাংবাদিকদের তথ্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তারা সমাজের জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখেন। তাই তথ্য যাচাই করে রিপোর্ট প্রকাশ করা হলে সাংবাদিকতা যেমন বিশ্বাসযোগ্য হয়, তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝেও অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ বা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয় না।”
দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে জনগণ যাতে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক বার্তা পায়, সে আহ্বানও জানান তিনি।