শান্তিগঞ্জ(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::
শান্তিগঞ্জ উপজেলার জামলাবাদ গ্রামে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম (৪০) নিহতের ঘটনার ৬দিন পর হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই জালাল হোসেন বাদী হয়ে শান্তিগঞ্জ থানায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ১৫/১৬ জনকে আসামী করে এই মামলাটি দায়ের করা হয়।
বাদী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার পক্ষে নিহতের বোন নাসিমা বেগম থানায় অভিযোগ জমা দেন। শুক্রবার (২০ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মামলাটি রেকর্ড করেন শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম আলী।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় এতো সংখ্যক আসামীর নাম উল্লেখ এবং অনুল্লেখ আরো ১৫/১৬ জনের নাম তালিকায় রাখায় জামলাবাদ গ্রামে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত গর্হিত। প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, থানায় দায়ের করা মামলায় যতজনকে আসামী করা হয়েছে তাদের কেউ কেউ ঘটনার সাথে জড়িত নয়, অনেকে এলাকায় ছিলেন না। জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত সুজন সিলেটে থেকেও হয়েছেন এই মামলার আসামী।
সোমবার বিকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জামলাবাদ গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পুরুষ মানুষের উপস্থিতি নেই। কোনো কোনো বাড়িতে নেই মহিলারাও। বাড়িতে তালা দিয়ে কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আসামীপক্ষের লোকেরা
নিহত নজরুল ইসলামের লোকজনের সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে নজরুল ইসলামের বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কথা হয় পাশের ঘরের হাসিনা বেগমের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ইয়াছমিন আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, তাজ উদ্দিন ও নজরুল ইসলামেরা প্রায়ই ঝগড়া করতেন। আমার মা তাদেরকে ঝগড়া করতে নিষেধ আপত্তি দিতেন। নজরুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর তারা আমার মাকেও আসামী করেছেন। এখন আমার মাও বাড়ি ছাড়া। অথচ আমার মা এই ঘটনার সাথে জড়িতই ছিলেন না। শুধুমাত্র আমাদের বাড়ির সামনে এসে ঝগড়া করতে বারণ করেছিলেন।
কথা হয় এই গ্রামের আবিদা সুলতানা ও কামরুন নাহার রুনার সাথে। তারা বলেন, হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি হোক এটা আমরাও চাই। কিন্তু কিছু নিরীহ লোককে আসামী করা হয়েছে। ১৮ বছরের নিচে কিছু অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকেও আসামী করা হয়েছে। এটা নিন্দনীয়। এছাড়াও আমাদের বাড়িতে চুরি করারও চেষ্টা করছে একটি মহল। তবে স্থানীয়রা বলছেন, চুরির চেষ্টা বা চুরির ঘটনা ঘটেছে এমন কিছু তারা শোনেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামলাবাদ গ্রামের এক ব্যক্তি বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। প্রথম দিনের পত্রিকায় দেখলাম ১৫/২০ জন লোক ঘটনার সাথে জড়িত। কারা মারামারি করেছেন তাদের নামও মিডিয়ায় এসেছে। অনেক সাংবাদিক সেদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, নিহতের আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলে সেই সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন তারা। এরপরও এমন একটি আলোচিত ঘটনায় নিরীহ কিছু মানুষকে আসামী করায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে খুনে প্রকৃত জড়িতদের গ্রেফতার ও নিরপরাধ মানুষকে হয়রানী না করার অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে নিহতের বোন নাসিমা বেগম বলেন, আমাদের কোনো লোকই বাড়িতে নেই। আমার ভাই জালাল হোসেনের চিকিৎসার জন্য সিলেটে আছি। আজ আমার মা বাড়িতে যাচ্ছেন। আমিও যাবো। আমরা নিরপাধ কাউকে আসামী করিনি। আমার জীবিত ভাই জালাল হোসেন যাদেরকে মারামারিতে দেখেছেন তাদেরকেই আসামী করা হয়েছে। আর সুজন চেয়ারম্যান তার আত্মীয় স্বজনকে পরিচালনা করছে। যিনি পরিচালনা করছেন তাকে তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না। আমি আমার ভাই হত্যার সুষ্ঠু ও সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেছি।
নজরুল হত্যা মামলায় প্রধান আসামী করা হলেও এই ঘটনার সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন বলে জানিয়েছেন জয়কলস ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাসিত সুজন।
তিনি বলেন, পারিবারিক কাজে হত্যাকাণ্ডের দুইদিন আগে শুক্রবার রাতে আমি সিলেট চলে আসি। এসব দ্বন্ধের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যেদিন হত্যার ঘটনা ঘটে ওইদিন সকাল ৮ টায় আমি মুঠোফোনে হত্যার ঘটনার খবর পাই। আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এই মামলায় আমার নাম জড়ানো হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আকরাম আলী বলেন, চুরি হচ্ছে এমন কোনো ঘটনার খবর আমরা পাইনি। মামলা ইতোমধ্যে রেকর্ড করা হয়েছে। যদি কেউ মারামারির ঘটনায় কে জড়িত না থাকে আর তার নাম মামলায় থাকে তাহলে তদন্ত করে তাকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, শান্তিগঞ্জ উপজেলার জামলাবাদ গ্রামের কান্দারহাটি এলাকার হাশিম উল্লাহর পুত্র নজরুল ইসলামের সাথে তাদের প্রতিবেশী মৃত মনির উদ্দিনের পুত্র তাজ উদ্দিনের বাড়ীর জায়গা নিয়ে পূর্ব বিরোধী চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুন (রোববার) সকাল ৭টার দিকে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন নজরুল ইসলাম। ঘটনায় জালাল হোসেন গুরুতর আহত হন।