সিলেট ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বালাগঞ্জে দায়সারা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন জনমনে ক্ষোভ

admin
প্রকাশিত মার্চ ২৮, ২০২৫, ১১:১২ অপরাহ্ণ
বালাগঞ্জে দায়সারা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন জনমনে ক্ষোভ

বালাগঞ্জে দায়সারা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন জনমনে ক্ষোভ

 

এম এ কাদির, বালাগঞ্জ :

দেশব্যাপী যথাযত মর্যাদায় ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হলেও ব্যতিক্রম ঘটেছে সিলেটের বালাগঞ্জে।

উপজেলা প্রশাসন দায়সারা ভাবে দিবসটি উদযাপন করায় ক্ষোভ বিরাজ করছে বালাগঞ্জ উপজেলা রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি স্থানীয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, সমমনা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ গণমাধ্যম কর্মীদের।

ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এধরনের বৈষম্যমূলক আচরণে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত হওয়ায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস পালনে উপজেলা প্রশাসনের পুষ্পার্ঘ্য অর্পন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা পরিবার বর্গের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা, উপস্থিত ছিলেন না উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের ১৫/১৬ জন কর্মকর্তা। জানাযায় কুচকাওয়াজ ও প্যারেড অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের (শিক্ষার্থী) স্কাউট সদস্যদের ফটোসেশনের জন্য কড়া রোদে দীর্ঘক্ষণ দাড় করিয়ে রাখা হয় এতে রোজাদার একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন, একাধিক শিক্ষার্থী রোজা ভাঙ্গতে বাধ্য হন। এযাবৎকাল রাজনৈতিক, সামাজিক, ও গণমাধ্যম কর্মীদের অংশ গ্রহণ ছাড়াই অনেকটা দ্বায়সারা ভাবে উপজেলা প্রশাসনের অধিকাংশ অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে বলে সচেতন নাগরিকদের পর্যবেক্ষণে ওঠে এসেছে। পর্যবেক্ষণের বিষয়টি আমলে নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় এযাবৎকালের অনুষ্ঠানগুলোর বিবরণ ঘেঁটে দেখা গেছে-বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজার্তিক দিবস ঘটা করে পালনের নির্দেশ থাকলেও ঢিলেঢালাভাবে সে সব কর্মসুচি পালন করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি ও সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি হতাশাজনক এমনকি অধিকাংশ অনুষ্ঠানে আসনগুলি ফাঁকা পড়ে থাকতেও দেখা যায়।

উপজেলা প্রশাসন উদ্যােগ ও সহযোগীতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে- ব্যানারে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, আনন্দ র‌্যালী বা শুভাযাত্রা লিখা থাকলেও উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে জনা কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যানার ধরে ফটোসেশন করেই এসব অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করেন। একজন কর্মকর্তার রুমের ভিতরে দেয়ালে ব্যানার সাঁটিয়ে একটি টেবিলকে ঘিরে কয়েকজন বসে ছবি তুলে আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের ফেইসবুক আইডিতে তা পোস্ট দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকার নির্দেশিত অনুষ্ঠানগুলোতে কর্তা ব্যক্তিদের এমন দ্বায়হীন প্রবণতা দেখে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে- উপজেলা পরিষদের নিয়মিত মাসিক আইন শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় যে প্রস্তাবনাগুলো উত্থাপন করা হয় তার কোনোটা রেজুলেশনে তুলা হয়, আবার কোনোটা তুলা হয়না বলে খোদ জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যে প্রস্তাবনাগুলো রেজুলেশনে স্থান পায় সেগুলোর কতটুকুই বা কার্যকর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে-এনিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।

এসব সভায় সরকারি দফতরগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকেন। এতে সমস্যা-সম্ভাবনা, উন্নয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা বা সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এবিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শামীম আহমদ জানান, উপজেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানগুলোর চিত্র দেখলেই সংশ্লিষ্টদের দ্বায়হীন মনোভাবের বিষয়টি প্রকাশ পায়। ভবিষ্যতে উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের অনিয়ম-অসঙ্গতি ও এমন দ্বায়সারা মনোভাব পরিহার করা উচিত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বালাগঞ্জে যোগদানের পর সাংবাদিকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন। এসময় বিগত দিনে উপজেলা প্রশাসনের অনিয়ম-অসঙ্গতি ও দ্বায়হীন মনোভাবের বিষয়টি সাংবাদিকরা আলোচনায় আনেন। এসব অসঙ্গতি পরিহারে তিনি আশ্বস্থ করলেও এখনো সব কিছু আগের মতই চালাচ্ছেন। এব্যাপারে

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মুজিবুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, দলীয় দাওয়াত পাইনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র উপজেলার আমীর ডা. আব্দুল জলিল বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ প্রত্যাশা করিনি।

উপজেলা খেলাফত মসলিসের সভাপতি মাওলানা মিসবাহ উদ্দিন মিসলু বলেন, এরকম জাতীয় প্রোগ্রামে দাওয়াত না দেওয়া ফ্যাসিবাদী আচরণ। উপজেলা প্রশাসনের এহেন কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাই।

এবিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের দাওয়াত করার জন্য তিনির অফিস স্টাফ একজন এনজিও কর্মীকে বলে দিয়েছিলেন। হয়ত সময় মত তারা দাওয়াত পৌঁছাতে গড়িমসি করেছে। কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন কয়েকজন ছুটি নিয়ে গেছেন কেউ কেউ অন্যত্র অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। অন্য যারা অংশগ্রহণ করেননি তাদের বিষয় জেলা প্রশাসকের কাছে জানাব।

সংবাদটি শেয়ার করুন