জৈন্তাপুর প্রতিনিধি:: দীর্ঘ ৩৮ বছরের বেশী সময় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা যাত্রাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন কটন রাম দাস, ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) ছিল তার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবস। এদিন দুপুর ১২ টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রিয় শিক্ষককের অবসর জনিত বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
১৯৮৬ সালের নিজের শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন কটন রাম দাস। শুরুতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্টানটি পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে সরকারি স্বীকৃতি পায় স্কুল টি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পান। এরপর একে একে কেটে গেছে প্রায় ৩৮ বছর।
শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সহকর্মীদের পাশাপাশি উপস্থিত হন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষককে অশ্রুসজল নয়নে বিদায় দেন তারা। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।
পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বিদায়ী শিক্ষককের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করা হয়। তার হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মানসূচক ক্রেস্ট। অনুষ্ঠানে অতিথি ও সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যবে প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিচারণ করেন। শিক্ষাগুরুকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে ফুলের মালা পড়িয়ে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেন তার শিষ্যরা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জৈন্তাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবেদ হোসেন বলেন, যেকোনো বিদায় বেদনার, কষ্টের। কটন রাম দাস'র মতো শিক্ষক এদেশের সম্পদ, তারাই সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। তার অনুপস্থিতিতে এ বিদ্যালয় তার শুন্যতা অনুভব করবে। সবকিছুরই শেষ আছে, না চাইলেও একদিন ঠিকই বিদায় বলতে হয়। আমি তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি। আর এ ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ডাঃ আবুল হাসান চৌধুরী স্কুল প্রতিষ্টার স্মৃতিচারণ করে বলেন, এই স্কুলটি অনেক কষ্টের বিনিময়ে এখানে দাড়িয়েছে আজ যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠান টি এখানে এসেছে অনেকেই আমাদের মাঝে নেই। আজ সত্যিই আমাদের জন্য বেদনার দিন, মন খারাপের দিন। কটন রাম দাস আর কোনোদিন ছাত্রদের পড়াতে স্কুলে আসবে না ভাবতেই খারাপ লাগছে। আমি বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বে দীর্ঘদিন ছিলাম তার কাছে অনেক অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।
তার ন্যায়পরায়নতা, কর্মদক্ষতা,
সততা ও সময়ানুবর্তিতা আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিনতি রানি বলেন আজ সত্যিই আমাদের জন্য বেদনার দিন, মন খারাপের দিন। কটন রাম স্যারকে আর কোনোদিন ক্লাসে পাব না ভাবতেই খারাপ লাগছে। সহকর্মী হিসেবে তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তার ন্যায়পরায়নতা, কর্মদক্ষতা, সততা ও সময়ানুবর্তিতা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। ৩৮টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তিনি নিজে তৈরি করেছেন যাদের অনেকেই চাকরি জীবনে দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নিজ সন্তানদেরকে যেভাবে মানুষ করেছেন, তেমনি করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও তিনি যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি।
অবসর জনিত বিদায়ী প্রধান শিক্ষক কটন রাম দাস তাঁর অতিত জীবনের বক্তব্য দিতে গিয়ে ভেঙ্গে পড়েন এবং এলাকা বাসীসহ সকল সহকর্মীর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া চান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সিদ্দিক আহমেদের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সিলেট বিভাগীয় কমিটির সেক্রেটারি আতাউর রহমান, সিলেট জেলা কমিটির সেক্রেটারি শোয়েবুর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি জৈন্তাপুর শাখার সভাপতি চাক্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান, সেক্রেটারি ও রনীফৌদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ, চিকনাগোল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম,রমজান রূপজান বাঘের খাল একাডেমির সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন, চিকনাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আহমদ, সহকারী শিক্ষক সুমন চন্দ্র দেব,দক্ষিণ কাপনা কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হেলাল আহমেদ, সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুল মুছাব্বির ফরিদ, চিকনাগুল ইউপি ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য অহিদুর রহমান, ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য শরিফুল ইসলাম, সমাজসেবী কামরুল ইসলাম কামরান,বশির আহমদ, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর,সোহেল রানা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ, রায়হান আহমেদ, আবু হুরায়রা, টিটন পাত্র, লব পাত্র শোকেন প্রমূখ।
নিউজ: +৮৮ ০১৭১৪-৬০৯৯৫৪ বিজ্ঞাপন: +৮৮ ০১৬১৪-৬০৯৯৫৪ ইমেইল: channeljaintanews24@gmail.com চিকনাগুল ৩১৫২- জৈন্তাপুর, সিলেট।