
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি
‘আমাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকতে হয় বিদ্যুৎবিহীন, তবুও মাস শেষে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস থেকে আসা বিলের কাগজে কমে না বিলের টাকার পরিমান। বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হলেতো বিলও কম আসার কথা। কিন্তু সব কিছুই চলছে উল্টো নিয়মে। এছাড়া প্রতি মাসে বিলের সাথে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে নিচ্ছে বিভিন্ন রকমের চার্জ। সে অনুযায়ীতো আমারা তাদের কাছ থেকে সেই পরিমাণ সেব পাচ্ছিনা’।
কথাগুলো সিলেট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১’র বিশ্বনাথ জোনাল অফিসের গ্রাহক ও উপজেলার ভোগশাইল গ্রামের বাসিন্দা সুহেব মিয়ার। ইলামেরগাঁও গ্রামের আমির আলী বলেন, কারেন্ট যায় না, মাঝে মাঝে আয়। এর পরেও মাস শেষে বিল দেওয়া লাগে বেশি।
তীব্র লোডশেডিংয়ে চরম অতিষ্ঠ প্রায় ৬৪ হাজার গ্রাহকের প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর লাগামহীন দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবি যেনোও ফুটে উঠেছে উপরোক্ত কথাগুলিতে। আর এজন্য পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীপনা, অদক্ষতা ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলাকে দায়ী করছেন গ্রাহকরা। তীব্র লোডশেডিংয়ের পরও মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল বেশি হারে আসার পাশাপাশি গ্রাহকদেরকে প্রতি মাসেই সেই বিলের সাথে গুনতে হয় ‘ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া, সার্ভিস চার্জ ও বিবিধ বিল/ফি’।
গত কয়েক দিন ধরে ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও দিনে-রাতে বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থাকছে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন। আর রাতের বেলা চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে উপজেলাবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা হচ্ছে ব্যাহত, ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দাভাব এবং চরমহারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ না থাকার চলমান সমস্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকার কারণ কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে পল্লী বিদ্যুতের বিশ্বনাথ জোনাল অফিস বা ৩টি (রশিদপুর, কালীগঞ্জ ও রামধানা) সাব-স্টেশনে থাকা অভিযোগ কেন্দ্রের মোবাইল ফোনও একাধিক বার কল করলেও তা রিসিভ হয়না, এমনকি কেউ সেই কলটি ব্যাকও করেনা।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১’র বিশ্বনাথ জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতের বিশ্বনাথ জোনাল অফিসের আওতাধীন ৩টি (রশিদপুর, রামধানা ও কালীগঞ্জ) সাব-স্টেশন রয়েছে। ওই ৩টি সাব-স্টেশনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে প্রায় ২৭ মেগাওয়াট। যার অধিনে উপজেলায় প্রায় ৬৪ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবা পান। আর উপজেলায় প্রতিদিন দিনের বেলা ৫-৬ মেগাওয়াট এবং রাতের বেলায় ১০-১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। আর গরম বেশি হলে চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৮ মেগাওয়াটে।
উপজেলার কালীগঞ্জের বাসিন্দা শফিক মিয়া, কালীজুরি গ্রামের প্রবীর দে, রাজু চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ মানুষের জীবনে সকল কাজই বিদ্যুৎ-এর উপর নির্ভর করে। তাই ঘন ঘন ওই তীব্র লোডশেডিং থমকে দিচ্ছে জনজীবন। আর বিশ্বনাথে নতুন ডিজিএম আসার পর থেকেই যেনো লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া অফিসের ফোনে কল দিলেও কেউ তা রিসিভ করেন না।
রামধানা গ্রামের নজরুল ইসলাম, শিমুলতলার কয়েছ মিয়া ও কাউপুরের ফয়জুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সোমবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত মধ্য রাত থেকে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলনা। তবে রাতে ও সকালে দুইবার ১০-২০ মিনিট করে বিদ্যুৎ এসে ছিলো। রাতের বেলা বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সারা রাতই ঘরের বাইরে কাটাতে হয়েছে।
শ্রীধরপুরের গ্রামের খামারী জয়নুল খান ও হাবড়া বাজারের আলী আহমদ জানান, গত তিন দিন ধরে লোডশেডিংয়ের কারনে রাতে ঘুমানোর কোন উপায় নেই। ঘরে অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে খুবই কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসে কল করলে তারা বলে মেইন লাইনে সমস্যা। কিন্তু সিলেটের কুমারগাঁও স্টেশনে যোগাযোগ করলে তারা বলেন মেইন লাইনে কোন সমস্যা নাই। বিশ্বনাথ জোনাল অফিসের কর্মকর্তাদের অবহেলা আর অদক্ষতার কারণেই আমাদেরকে প্রতিনিয়তই পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১’র বিশ্বনাথ জোনাল অফিসের ডিজিএম মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, বিশ্বনাথে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই, লোডশেডিং হচ্ছে না। তবে মেইন লাইনে সমস্যা রয়েছে, তাই বন্ধ হয়ে যায়। কবে নাগাদ ওই সমস্যার সমাধান হবে জানতে চাইলে তিনি (ডিজিএম) বলেন, এর কি কোন স্থায়ী সমাধান আছে? সমস্যা হবে, ঠিক হবে, আবারও সমস্যা হবে এবং আবারও ঠিক হবে। আর বিদ্যুৎ না থাকলে গ্রাহকদের ভোগান্তিতো হবেই বলে তিনি জানান।