সিলেট ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মাহফুজ আলমকে আন্দোলনের ‘নেপথ্য কারিগর’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন ড. ইউনূস

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৫:১০ অপরাহ্ণ
মাহফুজ আলমকে আন্দোলনের ‘নেপথ্য কারিগর’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন ড. ইউনূস

অনলাইন ডেস্ক::

অনুষ্ঠানে তিন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা, বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দেন মাহফুজ আলমকে (ছবি: ফোকাস বাংলা)

অনুষ্ঠানে তিন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা, বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দেন মাহফুজ আলমকে (ছবি: ফোকাস বাংলা)

 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি তার দীর্ঘদিনের বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথার ফাঁকে সফরসঙ্গী তিন জনকে পরিচয় করিয়ে দেন। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরে সরকার পতন আন্দোলনের ‘নেপথ্য কারিগর’ (বিহাইন্ড দ্য হোল) হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

 

‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ বক্তব্যে ড. ইউনূস তার বক্তব্য শুরু করেন সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার স্মৃতিচারণ দিয়ে। কীভাবে প্রায় ৪০ বছর আগে এক প্রায় অপরিচিত মার্কিন শহরের গভর্নর তার বন্ধু হয়ে উঠলেন, কীভাবে ধীরে ধীরে ক্লিনটনের উদ্যোগে শুরু হওয়া গ্রামীণ কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ‘গ্রামীণ আমেরিকা’র এখন প্রায় ২ লাখ সদস্য রয়েছেন, যাদের সবাই নারী। তারা মোট দেড় হাজার কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ বছরে এই ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। তার বক্তব্যের সময় বারবার হাততালি দিতে থাকেন উপস্থিত শ্রোতারা। এসময় তার বুদ্ধিদীপ্ত বিভিন্ন কথায় মানুষ বারবার হেসে ফেলছিলেন।

 

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সামনে এগিয়ে আসেন ক্লিনটন। বন্ধু ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড. ইউনূস তার দেখা একমাত্র বয়স্ক ব্যক্তি, যাকে নেতৃত্বে পেতে তরুণ সমাজ মরিয়া হয়েছিল। এমন হাস্যরসের পরেই বাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট মাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সেখানে ছাত্রদের অবদান তুলে ধরেন ড. ইউনূস। এই অনুষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত আছেন জানিয়ে তাদের মঞ্চে আসার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমসহ তিন জন স্টেজে আসেন। বিল ক্লিনটনও তাদের নাম শুনে হাততালি দেন।

 

বাকি দুই জনের একজন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি, অপরজন হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিন রাজিন।

 

তরুণ নেতারা মঞ্চে উপনীত হলে ড. ইউনূস বলেন, তারা যেভাবে কথা বলে, সেভাবে আমি কাউকে কোনোদিন বলতে শুনিনি। নতুন বিশ্ব গড়তে, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে তারা প্রস্তুত। আপনাদের অনুরোধ করছি তাদের পাশে থাকবেন, যেন তাদের এই স্বপ্ন পূরণ হয়। আমাদের সবারই এই দায়িত্ব নিতে হবে। এ সময় ক্লিনটনের হাত ধরে ইউনূস বলেন, ‘তুমি তো আমাদের সঙ্গে থাকবেই।’

 

ড. ইউনূস আরও বলেন, তাদের (তরুণ নেতা) দেখতে আর ১০টা মানুষের মতোই লাগবে আপনাদের। কিন্তু তাদের কথা শুনলে, তাদের কাজ দেখলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। তারা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য থেকে পিছপা হয়নি। তাদের বক্তব্য ছিল, মেরে ফেললেও আমরা পথ ছাড়বো না।

 

এ সময় মাহফুজ আলমকে সামনে এগিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, ‘মাহফুজ হচ্ছে আন্দোলনের পেছনের কারিগর। যদিও সে এটা স্বীকার করতে চায় না। বলে, সে একা নয়, আরও অনেকে (মাস্টারমাইন্ড) আছে। কিন্তু এরইমধ্যে সে এই গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর হিসেবে পরিচিত।’

 

‘এই আন্দোলনটা খুব সুশৃঙ্খল ছিল’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা হঠাৎ করে হয়েছে এমন কিছু নয়। খুবই গোছানো আন্দোলন। এছাড়াও এত বড় আন্দোলন হয়েছে, মানুষ জানতো না কে আন্দোলনের লিডার? যার ফলে একজনকে আটক করা যেতো না। বলাও যেতো না যে একজনকে আটক করলে আন্দোলন শেষ।’

 

মাহফুজকে দেখিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তার কথা শুনলে সারা পৃথিবীর যেকোনও তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। তারা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। তাদের সফলতার জন্য আপনার প্রার্থনা করবেন। তাদের জন্য হাততালি হোক।’ এ সময় বিল ক্লিনটনসহ সবাই হাততালি দিয়ে সম্মান জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন