ঢাকা ১১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল্লাহ্ কে, আপনি কি তাঁর পরিচয় জানেন? হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী  

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ১০:৪৭:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৪ পড়া হয়েছে
২২

আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? এই বিষয়ে আল্লাহপাক নিজেই পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আসলে তোমাদের রব সেই আল্লাহই, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে তারপর শাসন কর্তৃত্বের আসনে অধিষ্টিত হয়েছেন এবং বিশ্ব-জগতের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেছেন। কোনো শাফায়াতকারী (সুপারিশকারী ) এমন নেই, যে তার অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারে। এ আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রব। কাজেই তোমরা তারই ইবাদত করো। এরপরও কি তোমাদের চৈতন্য হবে না? (সূরা-ইউনুস, আয়াত-৩)

আল্লাহপাক এই বিশাল পৃথিবী সৃষ্টি করার পরে নিস্ক্রীয় হয়ে যাননি। বরং নিজের সৃষ্ট বিশ্ব-জাহানের শাসন কর্তৃত্বের আসনে নিজেই সমাসীন হয়েছেন এবং এখন সমগ্র জগতের ব্যবস্থাপনা কার্যত তিনিই পরিচালনা করেছেন। অবুঝ লোকেরা মনে করে, আল্লাহ বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করে তারপর একে এমনি ছেড়ে দিয়েছেন। যে যেভাবে চায় চলতে পারে। অথবা একে অন্যদের হাওয়ালা করে দিয়েছেন। তারা যেভাবে চায় একে চালাতে ও ব্যবহার করতে পারে। এ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত কুরআন যে সত্য পেশ করে তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তার এ সৃষ্টিজগতের সমগ্র এলাকায় নিজেই শাসন কর্তৃত্ব তার নিয়ন্ত্রণাধীন। বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন স্থানে প্রতি মুহূর্তে যা কিছু হচ্ছে তা সরাসরি তার হুকুমে বা অনুমতিক্রমে হচ্ছে। এ সৃষ্টি জগতের সাথে তার সম্পর্ক শুধু এতটুকই নয় যে, তিনি এক সময় একে সৃজন করেছিলেন। বরং তিনিই সর্বক্ষণ এর পরিচালক ও ব্যবস্থাপক, একে তিনিই প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন বলেই প্রতিষ্ঠিত আছে এবং তিনি চালাচ্ছেন বলেই চলেছে।

ওপরের তিনটি বাক্যে প্রকৃত সত্য বর্ণনা করা হয়েছে অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদের রব। এখন বলা হচ্ছে, এ প্রকৃত সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কোনো ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। মূলত রুবুবীয়াত তথা বিশ্ব -জাহানের সার্বভৌম ক্ষমতা, নিরুঙ্কুশ কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব যখন পুরোপুরি আল্লাহর আয়ত্বাধীন তখন এর অনিবার্য দাবী স্বরূপ মানুষকে তারই বন্দেগী করতে হবে। তারপর রবুবীয়াত শব্দটি যেমন তিনটি অর্থ হয় অর্থাৎ প্রতিপালন ক্ষমতা, প্রভুত্ব ও শাসন ক্ষমতা ঠিক তেমনি এর পাশাপাশি ইবাদত শব্দেরও তিনটি অর্থ হয় অর্থাৎ দাসত্ব, ও আনুগত্য। আল্লাহর একমাত্র রব হওয়ার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তারই প্রতি কৃতজ্ঞ হবে, তারই কাছে প্রার্থনা করবে এবং তারই সামনে ভক্তি শ্রদ্ধা-ভালবাসায় মাথা নোয়াবে। এটি হচ্ছে ইবাদতের প্রাথমিক অর্থ।

আল্লাহর একমাত্র মালিক ও প্রভূ হওয়ার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তার বান্দা ও দাস হয়ে থাকবে, তার মোকাবিলায় স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করবে না এবং তার ছাড়া আর কারোর মানসিক বা কর্মগত দাসত্ব করবে না। এটি ইবাদতের দ্বিতীয় অর্থ। আল্লাহকে একমাত্র শাসনকর্তা বলে মেনে নেবার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তার হুকুমের আনুগত্য করবে ও তার আইন মেনে চলবে। মানুষ নিজেই নিজের শাসক হবে না। এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারোর শাসন কর্তৃত্ব স্বীকার করবে না। এটি ইবাদতের তৃতীয় অর্থ।

যখন এ সত্য সবার সামনে প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে এবং পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সত্যের উপস্থিতিতে কি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তখন এরপরও কি চোখ খুলবে না এবং এমন বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকবে যার ফলে তোমাদের জীবনের সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত হয়েছে?

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাপাক আরও বলেন, আল্লাহ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর আলো। (বিশ্ব-জাহানে) তার আলোর উপমা যেন একটি তাকে একটি প্রদীপ রাখা আছে, প্রদীপটি আছে একটি চিমনির মধ্যে, চিমনিটি দেখতে এমন যেন মুক্তোর মতো ঝকঝকে নক্ষত্র, আর এ প্রদীপটি যয়তুনের এমন একটি মুবারক গাছের তেল দিয়ে উজ্জ্বল করা হয়, যা পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়। যার তেল আপনা আপনিই জ্বলে ওঠে, আগুন তাকে স্পর্শ করুক বা না করুক। আলোর ওপরে আলো (বৃদ্ধির সমস্ত উপকরণ একত্র হয়ে গেছে) আল্লাহ যাকে চান নিজের আলোর দিকে পথনির্দেশ করেন। তিনি উপমার সাহায্যে লোকদের কথা বুঝান। তিনি প্রত্যেকটি জিনিস খুব ভালো করেই জানেন। (সূরা-আন নূর, আয়াত-৩৫)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক আরো বলেন, ফেরেশতারা এবং রূহ তার দিকে উঠে যায় এমন এক দিনে যা পঞ্চাম হাজার বছরের সমান। (সূরা-আল মায়ারিজ, আয়াত-০৪)

মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের হুকুম পালন করার আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন আমিন আল্লাহুম্মা আমিন ছুম্মা আমিন।

 

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব। সাবেক:ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

সিলেটে আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের রেমিটেন্স যোদ্ধা ও ব্যবসায়ী সমাবেশ

Follow for More!

আল্লাহ্ কে, আপনি কি তাঁর পরিচয় জানেন? হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী  

প্রকাশিত: ১০:৪৭:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
২২

আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? এই বিষয়ে আল্লাহপাক নিজেই পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আসলে তোমাদের রব সেই আল্লাহই, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে তারপর শাসন কর্তৃত্বের আসনে অধিষ্টিত হয়েছেন এবং বিশ্ব-জগতের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেছেন। কোনো শাফায়াতকারী (সুপারিশকারী ) এমন নেই, যে তার অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারে। এ আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রব। কাজেই তোমরা তারই ইবাদত করো। এরপরও কি তোমাদের চৈতন্য হবে না? (সূরা-ইউনুস, আয়াত-৩)

আল্লাহপাক এই বিশাল পৃথিবী সৃষ্টি করার পরে নিস্ক্রীয় হয়ে যাননি। বরং নিজের সৃষ্ট বিশ্ব-জাহানের শাসন কর্তৃত্বের আসনে নিজেই সমাসীন হয়েছেন এবং এখন সমগ্র জগতের ব্যবস্থাপনা কার্যত তিনিই পরিচালনা করেছেন। অবুঝ লোকেরা মনে করে, আল্লাহ বিশ্ব-জাহান সৃষ্টি করে তারপর একে এমনি ছেড়ে দিয়েছেন। যে যেভাবে চায় চলতে পারে। অথবা একে অন্যদের হাওয়ালা করে দিয়েছেন। তারা যেভাবে চায় একে চালাতে ও ব্যবহার করতে পারে। এ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত কুরআন যে সত্য পেশ করে তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তার এ সৃষ্টিজগতের সমগ্র এলাকায় নিজেই শাসন কর্তৃত্ব তার নিয়ন্ত্রণাধীন। বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন স্থানে প্রতি মুহূর্তে যা কিছু হচ্ছে তা সরাসরি তার হুকুমে বা অনুমতিক্রমে হচ্ছে। এ সৃষ্টি জগতের সাথে তার সম্পর্ক শুধু এতটুকই নয় যে, তিনি এক সময় একে সৃজন করেছিলেন। বরং তিনিই সর্বক্ষণ এর পরিচালক ও ব্যবস্থাপক, একে তিনিই প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন বলেই প্রতিষ্ঠিত আছে এবং তিনি চালাচ্ছেন বলেই চলেছে।

ওপরের তিনটি বাক্যে প্রকৃত সত্য বর্ণনা করা হয়েছে অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদের রব। এখন বলা হচ্ছে, এ প্রকৃত সত্যের উপস্থিতিতে তোমাদের কোনো ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। মূলত রুবুবীয়াত তথা বিশ্ব -জাহানের সার্বভৌম ক্ষমতা, নিরুঙ্কুশ কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব যখন পুরোপুরি আল্লাহর আয়ত্বাধীন তখন এর অনিবার্য দাবী স্বরূপ মানুষকে তারই বন্দেগী করতে হবে। তারপর রবুবীয়াত শব্দটি যেমন তিনটি অর্থ হয় অর্থাৎ প্রতিপালন ক্ষমতা, প্রভুত্ব ও শাসন ক্ষমতা ঠিক তেমনি এর পাশাপাশি ইবাদত শব্দেরও তিনটি অর্থ হয় অর্থাৎ দাসত্ব, ও আনুগত্য। আল্লাহর একমাত্র রব হওয়ার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তারই প্রতি কৃতজ্ঞ হবে, তারই কাছে প্রার্থনা করবে এবং তারই সামনে ভক্তি শ্রদ্ধা-ভালবাসায় মাথা নোয়াবে। এটি হচ্ছে ইবাদতের প্রাথমিক অর্থ।

আল্লাহর একমাত্র মালিক ও প্রভূ হওয়ার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তার বান্দা ও দাস হয়ে থাকবে, তার মোকাবিলায় স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করবে না এবং তার ছাড়া আর কারোর মানসিক বা কর্মগত দাসত্ব করবে না। এটি ইবাদতের দ্বিতীয় অর্থ। আল্লাহকে একমাত্র শাসনকর্তা বলে মেনে নেবার অনিবার্য ফল হচ্ছে এই যে, মানুষ তার হুকুমের আনুগত্য করবে ও তার আইন মেনে চলবে। মানুষ নিজেই নিজের শাসক হবে না। এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারোর শাসন কর্তৃত্ব স্বীকার করবে না। এটি ইবাদতের তৃতীয় অর্থ।

যখন এ সত্য সবার সামনে প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে এবং পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সত্যের উপস্থিতিতে কি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তখন এরপরও কি চোখ খুলবে না এবং এমন বিভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকবে যার ফলে তোমাদের জীবনের সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতি সত্যবিরোধী পথে পরিচালিত হয়েছে?

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাপাক আরও বলেন, আল্লাহ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর আলো। (বিশ্ব-জাহানে) তার আলোর উপমা যেন একটি তাকে একটি প্রদীপ রাখা আছে, প্রদীপটি আছে একটি চিমনির মধ্যে, চিমনিটি দেখতে এমন যেন মুক্তোর মতো ঝকঝকে নক্ষত্র, আর এ প্রদীপটি যয়তুনের এমন একটি মুবারক গাছের তেল দিয়ে উজ্জ্বল করা হয়, যা পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়। যার তেল আপনা আপনিই জ্বলে ওঠে, আগুন তাকে স্পর্শ করুক বা না করুক। আলোর ওপরে আলো (বৃদ্ধির সমস্ত উপকরণ একত্র হয়ে গেছে) আল্লাহ যাকে চান নিজের আলোর দিকে পথনির্দেশ করেন। তিনি উপমার সাহায্যে লোকদের কথা বুঝান। তিনি প্রত্যেকটি জিনিস খুব ভালো করেই জানেন। (সূরা-আন নূর, আয়াত-৩৫)

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক আরো বলেন, ফেরেশতারা এবং রূহ তার দিকে উঠে যায় এমন এক দিনে যা পঞ্চাম হাজার বছরের সমান। (সূরা-আল মায়ারিজ, আয়াত-০৪)

মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের হুকুম পালন করার আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন আমিন আল্লাহুম্মা আমিন ছুম্মা আমিন।

 

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব। সাবেক:ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।