সিলেট ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জৈন্তাপুরে ৪০ বছরে শিক্ষকতার ইতি টেনে- অশ্রু শিক্ত নয়নে শিক্ষককে বিদায় জানাল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ণ
জৈন্তাপুরে ৪০ বছরে শিক্ষকতার ইতি টেনে- অশ্রু শিক্ত নয়নে শিক্ষককে বিদায় জানাল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

জাহিদুল ইসলাম : যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কাদঁছেন দীর্ঘদিনের কর্মস্থলের সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকারাও, আবার কেউ গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে এ যেন অন্যরকম এক পরিবেশ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একদম নিস্তব্ধ, নিথর, সুনসান নীরবতা। সবার চোখ জলে টলমল। অশ্রুসিক্ত নয়নে বিষাদের ছায়া নেমেছে পুরো স্কুল প্রাঙ্গনে। কারণ, প্রিয় শিক্ষকের বিদায় তাই বিমর্ষ, মনমরা, করুণ চাহনি চারদিকে।

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে  অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়, স্কুল কলেজের শিক্ষকদের পদত্যাগ আলোচনায় রয়েছে। ঠিক সেই সময়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষকের বিদায় বেলায় শত শত শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সিলেটর জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা: রেজিয়া বেগম।

অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদ্যালয়, শিক্ষক , বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করে  শেষ বিদায় জানানো হয় তাকে। একজন শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অনুকরণীয় থাকবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। কর্মজীবন শেষে নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক চাকরিজীবীকে নিদিষ্ট একটা সময়ে অবসর নিতে হয়। কর্মগুণে সেই বিদায় যেমনি স্মৃতি হয়ে থাকে, তেমনি ভালোবাসায় মুগ্ধতা ছড়ায়। এভাবেই প্রিয় শিক্ষককে রাজকীয় বিদায় জানালেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর)  দুপুর ১২ ঘটিকায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নানা আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

শিক্ষাগুরুর ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাছিরউদ্দীন সহ অন্যরা বলেন, তিনি আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন। তার দেওয়া পথে আমরা অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, স্যারের স্মৃতি ভোলার নয়।

প্রিয় স্যারের প্রতি আবেগ অনুভূতির প্রকাশ করেন ছোট ছোট সোনামনিরাও। বিদ্যালয়ে চতুর্থ ও ৫ম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আজকের পর থেকে স্যারকে আর স্কুলে দেখবো না। এটা খুবই কষ্টের।

রেজিয়া বেগমের শূন্যতা কখনই পূরণ হবার নয় বলে মনে করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আহমদ। তিনি বলেন, তিনি আমার শিক্ষক ও দীর্ঘ দিনের সহকর্মী। এমন নম্র, ভদ্র ও জ্ঞানী মানুষ খুব কমই হয়। স্যারের বিদায়ে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। অনেক ভালো শিক্ষক ছিলেন। তার মতো এমন একজন শিক্ষক পেলে আরও ভালো হবে।

 

৪০ বছরের কর্মজীবনে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেদে ফেলেন রেজিয়া বেগম । আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি তাদের (শিক্ষার্থীদের) কিছুই দিতে পারিনি। কিন্তু তারা আমাকে এভাবে সম্মান করবে তা কখনও ভাবিনি। এটা আমার জন্য গর্বের ও আনন্দের। যা বাকী জীবনে চলার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

 

জানা গেছে ১৫ এপ্রিল  ১৯৮৪ সনে উপজেলার হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা শুর করেন। ৪ বছর পরে তিনি সরকারি নিয়মঅনুযায়ী বদলি হয়ে চিকনাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর গত ১৯ আগস্ট ২০২৪ ইং তিন অবসর গ্রহন করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি প্রধান অতিথির বক্তব্যে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, একজন শিক্ষককে এভাবে সম্মান জানানোর উদ্যোগ প্রশংসণীয়। আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। শিক্ষকের এই বিদায় অনুষ্ঠান তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমন চন্দ্র দেব এর পরিচালনায় ও বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মৌঃ মুহিবুর রহমান এর সভাপতিত্বে , বিশেষ অতিথি হিসেবে  উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন  জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশন( ভুমি) ফারজানা আক্তার লাবনী, উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাবেদ হোসেন, সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ জুলহাস, চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবিএম জাকারিয়া, চিকনাগুল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আহমদ,  উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ,   আসাম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  আব্দু শহিদ, রনিফোদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ, বিছনাটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিক আহমেদ, যাত্রাগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কটন রাম দাস, শাহজালাল  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হালিমা বেগম, সহকারী শিক্ষক জহির উদ্দিন,  সেলাল আহমদ,মোঃজাকারিয়া, প্রমেশ দেবনাথ,আইসিটি শিক্ষক আমিনুর রশিদ,হাজেরা বেগম,রহিমা বেগম, জুসনা বেগম, রেখা বেগম, রিপা রানি দাস,পারবিন হেনা,রেখা রানি ভট্টা চার্য,হাম্মাদ, হাজেরা বেগম , সালমা,বেগম,  লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক কামরান আহমদ, ইউপি সদস্য মছদ্দর আলী, ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম, সমাজসেবি মোক্তার আহমদ, জহির উদ্দিন, আমির উদ্দিন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী,সোহেল আহমদ,সোহেল ফারুক,  মইনুল, আব্দুল জব্বার, জবাবে আহমদ, আব্দুর নুর, রাদেক আহমেদ, আরিফ আহমদ,ফলিক আহমদ,বাপ্পু,  ইকবাল,মাহবুব, সায়েম,কামিল, ডন বিশ্বাস,নাহিদ আহমদ প্রমূখ।

সংবাদটি শেয়ার করুন