ঢাকা ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের উচ্ছ্বাস, ভোটদানের পদ্ধতি জানাল ইসি

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ১১:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • ১২ পড়া হয়েছে
২২

অনলাইন ডেস্ক :

প্রথমবারের মতো বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোটের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ–আমেরিকা পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোও প্রস্তুতি শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।

 

১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ। প্রবাসীরা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করলেই ব্যালট পেপার পাঠিয়ে দেওয়া হবে ঠিকানায়। ভোট দিয়ে তা আবার ডাকযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে পারবেন তারা।

 

সৌদি আরবে দশ বছর ধরে থাকা লক্ষ্মীপুরের তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে থাকতে ভোট দিতে পারেননি। এবার বিদেশে থেকেও দেশের নেতৃত্ব বাছাইয়ে অংশ নিতে পারবেন-এ সুযোগ তাকে আনন্দিত করছে। একই অনুভূতি দুবাই প্রবাসী শ্রমিক আরিফুল ইসলামেরও। বহু বছর দাবি জানিয়ে ভোটাধিকার না পেলেও এবার রাষ্ট্র তাদের কথা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা দিলারা আক্তার মনে করেন, প্রবাসীদের ভোটই নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ তৈরি করবে।

 

ভোটের নিরাপত্তা ও কারচুপি এড়ানো নিয়েও আলোচনা রয়েছে প্রবাসীদের মধ্যে। ইতালি-বাংলা ফোরামের সভাপতি তাইফুর রহমান চান, পুরো প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও শক্তভাবে মনিটরিং করা হয়। যাদের জানাশোনা কম, তাদের আরও সহায়তা দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার বিভাগের মহাপরিচালক এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল জানিয়েছেন, যাদের এনআইডি আছে এবং ভোটার, তারা বৈধ-অবৈধ যেকোনো অবস্থাতেই পোস্টাল ভোট অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন। হাইকমিশনগুলো সরাসরি ভোট প্রক্রিয়ায় যুক্ত না থাকলেও প্রচারণা ও তথ্য–সহায়তায় কাজ করছে।

 

জনশক্তি ব্যুরোর হিসাবে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। উপসাগরীয় ছয় দেশেই আছেন প্রায় ৬০ লাখ কর্মী। তাই প্রবাসী ভোট অংশগ্রহণের ফলে নির্বাচনে বড় মাত্রার ভোট যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

 

ইসি জানিয়েছে, প্রবাসীরা আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করবেন। অ্যাপটির জিও–লোকেশন চালু থাকায় বাংলাদেশ থেকে এটি ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করার পর এনআইডি ও লাইভ ফেস রিকগনিশন যাচাই করতে হবে। অন্তত ৭০ শতাংশ মিল হলে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। এরপর ঠিকানায় পাঠানো হবে ব্যালট পেপার।

 

প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ ভোট দিতে পারবেন না। সবাই একই ব্যালট পেলেও ভোটার অ্যাপে ঢুকে কিউআর কোড স্ক্যান করলেই নিজের আসনের প্রার্থী তালিকা দেখতে পাবেন। পছন্দের প্রতীকে টিক দিয়ে ব্যালট খামে ভরে পোস্ট অফিসে জমা দিলেই এটি পৌঁছে যাবে দেশে।

 

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে প্রবাসীদের নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার ৩৬ দেশের প্রবাসীরা ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়ার ১৪ দেশের জন্য সময় ২৪–২৮ নভেম্বর। ইউরোপের ৪২ দেশে নিবন্ধন চলবে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর। সৌদি আরবে সময় ৪–৮ ডিসেম্বর। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৮ দেশ ৯-১৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি ১৪ দেশ ১৪–১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।

 

প্রথমবারের মতো বিদেশে থেকেও দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে অনেকে বলছেন-এবারের নির্বাচন সত্যিকারের জাতীয় অংশগ্রহণের রূপ পেতে যাচ্ছে।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকার তিনটি আসনে ‘বিশেষ বরাদ্দ: যা জানালেন উপদেষ্টা

Follow for More!

নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের উচ্ছ্বাস, ভোটদানের পদ্ধতি জানাল ইসি

প্রকাশিত: ১১:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
২২

অনলাইন ডেস্ক :

প্রথমবারের মতো বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোটের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ–আমেরিকা পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোও প্রস্তুতি শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।

 

১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ। প্রবাসীরা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করলেই ব্যালট পেপার পাঠিয়ে দেওয়া হবে ঠিকানায়। ভোট দিয়ে তা আবার ডাকযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে পারবেন তারা।

 

সৌদি আরবে দশ বছর ধরে থাকা লক্ষ্মীপুরের তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে থাকতে ভোট দিতে পারেননি। এবার বিদেশে থেকেও দেশের নেতৃত্ব বাছাইয়ে অংশ নিতে পারবেন-এ সুযোগ তাকে আনন্দিত করছে। একই অনুভূতি দুবাই প্রবাসী শ্রমিক আরিফুল ইসলামেরও। বহু বছর দাবি জানিয়ে ভোটাধিকার না পেলেও এবার রাষ্ট্র তাদের কথা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা দিলারা আক্তার মনে করেন, প্রবাসীদের ভোটই নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ তৈরি করবে।

 

ভোটের নিরাপত্তা ও কারচুপি এড়ানো নিয়েও আলোচনা রয়েছে প্রবাসীদের মধ্যে। ইতালি-বাংলা ফোরামের সভাপতি তাইফুর রহমান চান, পুরো প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ ও শক্তভাবে মনিটরিং করা হয়। যাদের জানাশোনা কম, তাদের আরও সহায়তা দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার বিভাগের মহাপরিচালক এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল জানিয়েছেন, যাদের এনআইডি আছে এবং ভোটার, তারা বৈধ-অবৈধ যেকোনো অবস্থাতেই পোস্টাল ভোট অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন। হাইকমিশনগুলো সরাসরি ভোট প্রক্রিয়ায় যুক্ত না থাকলেও প্রচারণা ও তথ্য–সহায়তায় কাজ করছে।

 

জনশক্তি ব্যুরোর হিসাবে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। উপসাগরীয় ছয় দেশেই আছেন প্রায় ৬০ লাখ কর্মী। তাই প্রবাসী ভোট অংশগ্রহণের ফলে নির্বাচনে বড় মাত্রার ভোট যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

 

ইসি জানিয়েছে, প্রবাসীরা আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করবেন। অ্যাপটির জিও–লোকেশন চালু থাকায় বাংলাদেশ থেকে এটি ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করার পর এনআইডি ও লাইভ ফেস রিকগনিশন যাচাই করতে হবে। অন্তত ৭০ শতাংশ মিল হলে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। এরপর ঠিকানায় পাঠানো হবে ব্যালট পেপার।

 

প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ ভোট দিতে পারবেন না। সবাই একই ব্যালট পেলেও ভোটার অ্যাপে ঢুকে কিউআর কোড স্ক্যান করলেই নিজের আসনের প্রার্থী তালিকা দেখতে পাবেন। পছন্দের প্রতীকে টিক দিয়ে ব্যালট খামে ভরে পোস্ট অফিসে জমা দিলেই এটি পৌঁছে যাবে দেশে।

 

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে প্রবাসীদের নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার ৩৬ দেশের প্রবাসীরা ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়ার ১৪ দেশের জন্য সময় ২৪–২৮ নভেম্বর। ইউরোপের ৪২ দেশে নিবন্ধন চলবে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর। সৌদি আরবে সময় ৪–৮ ডিসেম্বর। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৮ দেশ ৯-১৩ ডিসেম্বর। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি ১৪ দেশ ১৪–১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।

 

প্রথমবারের মতো বিদেশে থেকেও দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে অনেকে বলছেন-এবারের নির্বাচন সত্যিকারের জাতীয় অংশগ্রহণের রূপ পেতে যাচ্ছে।