
সিলেটে ব্যাটারী চালিত রিক্সা ইজিবাইকের রোড পারমিট দিয়ে বৈধভাবে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে সিলেট মহানগর ব্যাটারী চালিত রিক্সা ইজিবাইক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে নগরীর সুবিদবাজারস্থ সিলেট প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট মহানগর ব্যাটারী চালিত রিক্সা ইজিবাইক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম মারুফ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেট মহানগরীতে প্রায় ১৫-২০ হাজার ব্যাটারি চালিত রিক্সা/ইজিবাইক মালিক ও শ্রমিকরা জীবন-জীবিকার সংকটে রয়েছে। আমরা অনেক দিন ধরে সরকারের কাছে বৈধভাবে নাম্বার প্লেট, রেজিস্ট্রেশন ও সুস্পষ্ট নীতিমালা দিয়ে রিক্সা/ইজিবাইক চলাচলের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এবং কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে করে রিক্সা কিনেছেন। এই রিক্সাগুলোই মালিক-শ্রমিকদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের আশ্রয়স্থল।
তিনি আরো বলেন, দুঃখজনক বিষয় সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশের অব্যাহত হয়রানির কারণে রিক্সা-ইজিবাইক চালকদের নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রিক্সা আটক, জরিমানা, রেকার বিলসহ সব মিলিয়ে মালিক-শ্রমিকরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। সিটি কর্পোরেশন এলাকা ৫৮ বর্গ কিলোমিটার, ৪২টি ওয়ার্ড, ১৩০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সবমিলিয়ে সিসিকের এলাকায় প্রায় ৫,৪৮,৫১৪ জন জনসংখ্যা। এতো বড় একটি শহরে রিক্সা-ইজিবাইক চলাচল বন্ধ হওয়ায় স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অফিসগামী কর্মজীবী মানুষসহ নগরবাসী মহা দুর্ভোগে পড়েছেন। পরিবহনের অভাবে অনেকেই সময়মতো কেউ অফিস বা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। অন্যদিকে মালিক-শ্রমিকদের পরিবার পড়েছে অতিমাত্রায় আর্থিক দৈন্যদশায়। প্রতিদিনের আয়-রোজগার বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন এবং তারা অনেক কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ব্যাটারি চালিত রিক্সা/ইজিবাইক অবাধে চলাচল করলেও সিলেটে কেন চলতে দেওয়া হচ্ছে না? ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় রিক্সা চালকরাও যেন পিছিয়ে না পড়ে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটারি চালিত রিক্সা/ইজিবাইক মালিক-শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও ইজিবাইকের রোড পারমিট প্রদান, আটককৃত ব্যাটারি চালিত রিক্সা অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া, রেকার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করা, শ্রমিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা, সরকারিভাবে রিক্সা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন, ট্রাফিক পুলিশের অহেতুক হয়রানি বন্ধ করা এবং উচ্ছেদ করা বিদ্যুতের মিটারগুলো পুনরায় সংযোগ দেওয়া।
তিনি আরো বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ব্যাটারি চালিত রিক্সা/ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি প্রদান করতে হবে। এতে শুধু মালিক-শ্রমিকদের জীবন বাঁচাবে না, বরং নগরবাসী, ছাত্র-ছাত্রী, সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবী সকলের যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। সিলেটে রিক্সা-ইজিবাইক বন্ধ থাকায় নগরবাসী ও হাজারো শ্রমিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাই মানবিক দিন বিবেচনা করে অবিলম্বে সিলেট নগরীতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা/ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি ও বৈধভাবে চলাচলের জন্য রোড পারমিট প্রদান করার জন্য মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মালিক-শ্রমিকরা নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ব্যথিত সিসিকের আওতাধীন কয়েকটি রোডে ব্যাটারি চালিত রিক্সা/ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি প্রদানের দাবি জানান। রোডগুলো হলো-টুকের বাজার হইতে দর্শনদেউড়ি, লাক্কাতুরা হইতে হোটেল পলাশ, টিলাগড় হইতে আম্বরখানা বড় বাজার, শাহী ঈদগাহ হইতে জেল রোড, শাহপরান (রাঃ) হইতে ধোপাদিঘীর পূর্ব পার, কুশিঘাট হইতে রুজভিউ পয়েন্ট, হোটেল রোজ ভিউ হইতে শিবগঞ্জ, মদিনা মার্কেট হইতে মেডিকেল পয়েন্ট, কানিশাইল হইতে রিকাবী বাজার মসজিদ, শাহী ঈদগাহ হইতে ধোপাদিঘীর পূর্ব পার, বেতের বাজার হইতে তুপখানা, দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল হইতে ক্বীন ব্রিজ, মখন দোকান হইতে ক্বীন ব্রিজ, খালোর মুখ হইতে হুমায়ুন চত্বর, আলমপুর হইতে হুমায়ুন চত্বর পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর ব্যাটারী চালিত রিক্সা ইজিবাইক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, সহ সভাপতি আব্দুল জলিল, আব্দুল কাইয়ুম, শাহজাহান সিরাজ, সহ সাধারণ সম্পাদক কয়েছ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম, কোষাধ্যক্ষ রাজু কান্তি দাশ, প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান, সদস্য আব্দুর রহমান কাঞ্চন, সুমন মিয়া প্রমুখ।
Channel Jainta News 24 




















