
সাধারণ আয়োজনের ভেতর দিয়ে শেষ বিদায় ঘটেছে অসাধারণ রাজনৈতিক নেতা মতিয়া চৌধুরীর। চিরনিদ্রায় শায়িত করার আগ পর্যন্ত বিরল ও ব্যতিক্রম সব ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এ নেতার জানাজা ও শেষ বিদায়ে জাতীয় রাজনীতিবিদদের দেখা মেলেনি। শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত হননি নিজ দলের সহকর্মীরাও। তবে সাধারণের বেশে এসেছেন দলের কর্মী-সমর্থক ও মতিয়ার শুভাকাঙ্খীরা।
বিদায় জানানোর আগে কোনো অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ করা এসবও ছিল না। এক লাইনের একটি বক্তব্য ছিল ইমাম সাহেবের, আমাদের সকলের চেনা মতিয়া চৌধুরীর জানাজা। মোটকথা, অতিসাধারণের জমায়েত ও সাধারণের আয়োজনের ভেতর দিয়ে অসাধারণ নেতা, অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরীকে শেষ বিদায় জানাতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আজাদ মসজিদের সহকারী সুপারভাইজার মহিউদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, জানাজায় মসজিদের নিচতলা ও বারান্দা ভরে গেছে। জানাজায় সাধারণ মরহুমের চেয়ে বেশি লোক সমাগম ঘটেছে।
মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্বামী বজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হয়েছে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীকে।
বৃহস্পতিবার বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজায় তাকে নিয়ে বাড়তি কোনো স্মৃতিচারণ বক্তব্য অনুষ্ঠান ছিল না। একেবারেই সাদামাটা পরিচিতিপর্বে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন, আমাদের সকলের পরিচিত মতিয়া চৌধুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
তার আগে সকালে মতিয়া চৌধুরীর মরদেহ তার রমনা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানেও সাদামাটা আয়োজনে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জানাজায় আওয়ামী লীগের ব্যানারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর দৈনিক সংবাদ পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়।
বেলা সাড়ে ১২টার আগে মতিয়া চৌধুরীর মরদেহ গুলশানের আজাদ মসজিদে নেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে থাকায় জানাজায় দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাকে দেখা যায়নি। তবে দলটির সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে আজাদ মসজিদে দেখা যায়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের লীগের কর্মী, কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের দেখা যায় জানাজায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
জোহরের ফরজ নামাজ শেষে মতিয়া চৌধুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মতিয়া চৌধুরীর জন্য সবার কাছে দোয়া চান তার ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী। জানাজা শেষে আজাদ মসজিদের দক্ষিণ পাশের গেটে মতিয়া চৌধুরীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এখানেও আওয়ামী লীগ, দলটির সভাপতির নামে আলাদা করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রীসহ তিন জনের আমৃত্যু কারাদণ্ডস্বামী হত্যা মামলায় স্ত্রীসহ তিন জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড
মরদেহবাহী ফ্রিজিং গাড়ি আজাদ মসজিদের গেট থেকে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের ৪০-৫০ জন কর্মীকে দুই মিনিটের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নামে নানান স্লোগান দেন। মতিয়া চৌধুরীর জানাজাকে ঘিরে আজাদ মসজিদ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত মতিয়া চৌধুরী গতকাল বুধবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নতুন জায়গা চাওয়া হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। না পেয়ে সেখানে মতিয়া চৌধুরীর স্বামী বজলুর রহমানের কবরেই তাকে শায়িত করা হয়।
সূত্র: দেশ রুপান্তর