ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজার জেলা: প্রাচীন ইতিহাসের আয়নায়

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ০৭:৫৯:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ১২ পড়া হয়েছে
২২

আলী মোহাম্মদ মঞ্জুর (মৌলভীবাজার) থেকে ::ঝিলমিল হাওর, সবুজ চা-বাগান, পাহাড়ি ভূপ্রান্তি এসব দৃশ্যপটের মাঝেই লুকিয়ে আছে মৌলভীবাজার জেলা-এর (সিলেট বিভাগ) এক জীবন্ত ইতিহাস। ধীরে ধীরে দেখে নেওয়া যাক, এই জেলার ইতিহাসের কর্ণতম কিছু অধ্যায় উপর থেকে নিচে, প্রাচীন সময় হতে আধুনিকাব্দ পর্যন্ত।

মৌলভীবাজার অঞ্চলে অ্যালং কালে “ইটা রাজ্য” নামে এক স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য ছিল। এই রাজ্যের রাজধানী কখনও ভুমিউড়া বা এুলাইতলি এলাকা ছিলো। এছাড়াও এই অঞ্চল ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের কপার পাতায় উল্লেখিত হয় যা প্রমাণ করে, প্রথম থেকেই মানুষের বসবাস ও শাসন এখানে গঠনশীল ছিল। ১৩০৩ সালের পর, ইসলামি প্রচারে অংশ নেয়া সুফি সাধকরা এই অঞ্চলে স্থায়ী হন যেমন শাহ মুস্তাফা (র.) ব্যক্তিগতভাবে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

১৮৮২ সালে ব্রিটিশ শাসনের সময় এই অঞ্চলকে “দক্ষিণ সিলেট মহকুমা” নামে অধিষ্ঠিত করা হয়। এরপর চা শিল্পের প্রসার ঘটলো বিশেষ করে আজকের শ্রীমঙ্গল এলাকায়। এ সময় থেকেই মৌলভীবাজার চা নগরী হিসেবে খ্যাতি পেল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জেলা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গন। ২০ ডিসেম্বর‐এ মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খনির বিস্ফোরণে অন্তত ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যা এখানকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি মর্মস্পর্শী অধ্যায়। এছাড়া বিদ্রোহ ও সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন অংশে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

এ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে রয়েছে গয়ঘর মসজিদ (মসজিদ ১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত)। এখানকার আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠী, বাঙালি, মণিপুরি সহ বিভিন্ন সম্প্রদায় বহু লেনদেনে দিন গিয়েছে সেই মেলবন্ধন আজও দৃশ্যমান। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪-এ মৌলভীবাজারকে পূর্ণ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে শিক্ষা, পর্যটন, প্রশাসনিক উন্নয়নে দ্রুত এগিয়েছে জেলা।

তবে, সম্প্রতি কিছু আইন-শৃঙ্খলা ও অধিকার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। এভাবে, একটি মাত্র জায়গায় মৌলভীবাজার হতে দেখা যায় ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের স্বাক্ষর। রাজ্য রাজত্ব, ব্রিটিশ শাসন, মুক্তিযুদ্ধ, আজকের উন্নয়ন সবই এখানে একাকার। এবং এই ইতিহাস শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক বা সুবর্ণ পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় প্রতিদিনের মানুষের জীবনে, তাদের স্মৃতি ও সংগ্রামে লিপিবদ্ধ।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ ও কাতার সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে প্রেষণে জনবল নিয়োগ সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষর

Follow for More!

মৌলভীবাজার জেলা: প্রাচীন ইতিহাসের আয়নায়

প্রকাশিত: ০৭:৫৯:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
২২

আলী মোহাম্মদ মঞ্জুর (মৌলভীবাজার) থেকে ::ঝিলমিল হাওর, সবুজ চা-বাগান, পাহাড়ি ভূপ্রান্তি এসব দৃশ্যপটের মাঝেই লুকিয়ে আছে মৌলভীবাজার জেলা-এর (সিলেট বিভাগ) এক জীবন্ত ইতিহাস। ধীরে ধীরে দেখে নেওয়া যাক, এই জেলার ইতিহাসের কর্ণতম কিছু অধ্যায় উপর থেকে নিচে, প্রাচীন সময় হতে আধুনিকাব্দ পর্যন্ত।

মৌলভীবাজার অঞ্চলে অ্যালং কালে “ইটা রাজ্য” নামে এক স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য ছিল। এই রাজ্যের রাজধানী কখনও ভুমিউড়া বা এুলাইতলি এলাকা ছিলো। এছাড়াও এই অঞ্চল ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের কপার পাতায় উল্লেখিত হয় যা প্রমাণ করে, প্রথম থেকেই মানুষের বসবাস ও শাসন এখানে গঠনশীল ছিল। ১৩০৩ সালের পর, ইসলামি প্রচারে অংশ নেয়া সুফি সাধকরা এই অঞ্চলে স্থায়ী হন যেমন শাহ মুস্তাফা (র.) ব্যক্তিগতভাবে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

১৮৮২ সালে ব্রিটিশ শাসনের সময় এই অঞ্চলকে “দক্ষিণ সিলেট মহকুমা” নামে অধিষ্ঠিত করা হয়। এরপর চা শিল্পের প্রসার ঘটলো বিশেষ করে আজকের শ্রীমঙ্গল এলাকায়। এ সময় থেকেই মৌলভীবাজার চা নগরী হিসেবে খ্যাতি পেল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জেলা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গন। ২০ ডিসেম্বর‐এ মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খনির বিস্ফোরণে অন্তত ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যা এখানকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি মর্মস্পর্শী অধ্যায়। এছাড়া বিদ্রোহ ও সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন অংশে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

এ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় স্থাপনার মধ্যে রয়েছে গয়ঘর মসজিদ (মসজিদ ১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত)। এখানকার আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠী, বাঙালি, মণিপুরি সহ বিভিন্ন সম্প্রদায় বহু লেনদেনে দিন গিয়েছে সেই মেলবন্ধন আজও দৃশ্যমান। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪-এ মৌলভীবাজারকে পূর্ণ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে শিক্ষা, পর্যটন, প্রশাসনিক উন্নয়নে দ্রুত এগিয়েছে জেলা।

তবে, সম্প্রতি কিছু আইন-শৃঙ্খলা ও অধিকার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। এভাবে, একটি মাত্র জায়গায় মৌলভীবাজার হতে দেখা যায় ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের স্বাক্ষর। রাজ্য রাজত্ব, ব্রিটিশ শাসন, মুক্তিযুদ্ধ, আজকের উন্নয়ন সবই এখানে একাকার। এবং এই ইতিহাস শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক বা সুবর্ণ পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় প্রতিদিনের মানুষের জীবনে, তাদের স্মৃতি ও সংগ্রামে লিপিবদ্ধ।