
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের বৈদেশিক দফতরের চতুর্থ পরামর্শ সভা, যা দুই দেশের বৈদেশিক সচিবদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়, ৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে কলোম্বোতে সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব অরুনি রানারাজা এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক সচিব আসাদ আলম সিয়াম এই পরামর্শ সভা যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেছেন। এই পরামর্শ সভা পূর্ববর্তী ঢাকায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় পর্বের (২০১৭) ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে।
পরামর্শ সভায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পর্যালোচনা এবং নতুন ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আলোচনা হয়েছে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, সংযোগ, পর্যটন, মৎস্য, যুরকাজ, সংস্কৃতি এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। উভয় পক্ষ বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশটির উন্নয়ন প্রকল্প, লজিস্টিকস, চাষাবাদ এবং পর্যটন সম্পর্কিত ব্যবসায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে, একই সময়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার আরও বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে বিশেষ করে epz, sez এবং api শিল্প পার্কে, যেখানে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত-ফার্মাসিউটিক্যালস, আতিথ্য, পর্যটন, অটোমোবাইল, আইসিটি, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও জুতো শিল্প।

শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সময় বাংলাদেশ যে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রদান করেছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে। উভয় পক্ষ বাণিজ্য সুবিধা, বাণিজ্য আলোচনাকারী কমিটি ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিংগুলোর তাড়াতাড়ি আয়োজন এবং বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে, এবং উওয় পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ বুদ্ধি করতে মূলত আইনি যন্ত্রগুলো দ্রুত চূড়ান্ত করার ওপর সম্মত হয়েছে।
সংযোগ এবং পর্যটনকে প্রধান আলোচনার বিষয় হিসেবে নিয়েছে। উভয় দেশ শিপিং খাতের শক্তিশালীকরণ এবং চট্টগ্রাম কলোম্বো পোর্ট সংযোগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করেছে। শ্রীলঙ্কা গ্রিন পর্যটন উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে এবং চা ও বৌদ্ধ পর্যটন কিটসহ যৌথ পর্যটন উদ্যোগ ও পর্যটন সহযোগিতার স্মারক চুক্তি (mou) চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
কৃষি ও মৎস্য খাতে সহযোগিতার সুযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, বিশেষ করে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, গভীর সমুদ্র দীর্ঘ লাইনের মৎস্য আহরণ ও মিঠাপানি মাছ চাষে জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কৃষকদের জন্য এক্সপোজার ভিজিটের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং পশুপালন খাতে সহযোগিতা প্রদান করেছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং যুব উন্নয়ন সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত বার্ষিক প্রশিক্ষণ সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় দেশ অ্যাথলেটিক্স, ক্রীড়া বিজ্ঞান ও ক্রিকেটে ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম বিনিময় এবং জাতীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল উদ্ভাবনকে প্রোমোট করার জন্য বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেক করিডর গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। উভয় দেশ saarc, bimstec এবং সেজ-এর মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি পুনঃনিশ্চিত করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ গ্রীলঙ্কার কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এবং তাদের সুষম জীবন, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছে।
পরিদর্শনের সময়, বাংলাদেশের বৈদেশিক সচিব প্রধানমন্ত্রী ডঃ হরিনী আমরাসুরিয়া এবং বৈদেশিক বিষয়ক উপমন্ত্রী অরুণ হেমচন্দ্রার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি পরবর্তী চতুর্থ পরামর্শ সভার জন্য শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক সচিবকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দেন হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং বৈদেশিক বিষয়ক, শিপিং ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা। শ্রীলঙ্কা প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন হাইকমিশনার ধরমপালা ভীরাক্কোডি, সাউথ এশিয়া ও saarc ডিভিশনের ডিরেক্টর জেনারেল সামান্থা পাখিরানা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা।
Channel Jainta News 24 






















