ঢাকা ০৮:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নকলায় বৃষ্টিতে ডুবে গেছে কৃষি মাঠ: আমনে অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা! পিছালো আগাম শাক সবজির আবাদ

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ০৫:১৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • ৩৬ পড়া হয়েছে
১৯

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:শেরপুরের নকলায় শুক্রবার মধ্যরাত হতে দুই দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষি আবাদী মাঠ। বৃষ্টির পাশাপাশি মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়ায় আমন আবাদসহ শীত কালীন শাক সবজির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে আমন ধান কাটার আগেই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক। এছাড়া জমির জোঁ নষ্ট হওয়ায় পিছিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে শীতকালীন আগাম শাক সবজির আবাদ।

 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঝড়ো হাওয়ায় পানিতে পড়ে গেছে ধানের ভিতর চাল হয়ে যাওয়া জমির ধান গাছ। তাছাড়া শীত কালীন শাক সবজির ক্ষেত ও শাক সবজির বীজ বপণের জন্য তৈরী করা জমিতে পানি জমে জমির জোঁ নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় সব কয়টা ইউনিয়নের নিচু এলাকার কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি জন জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ; হতাশায় পড়েছেন উপজেলার হাজারো কৃষিজীবী পরিবার।

 

শীত কালীন শাক সবজি চাষে ও উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন কৃষক। তারা জানান, উপজেলায় শাতধিক ফলজ বৃক্ষ উপড়ে পড়ে গেছে। রাস্তার ধারে অনেক পুকুর পাড়ে রোপন করা কলা গাছ ও বিভিন্ন ফলজ গাছ উপড়ে পড়ে যাওয়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

 

তথ্য মতে, উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি আছে ১৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর। তবে নীট ফসলী জমি রয়েছে ১৪ হাজার ৮১০ হেক্টর। এরমধ্যে উঁচু জমি আছে ৫ হাজার ১৪০ হেক্টর, মাঝারি উঁচু জমি ৪ হাজার ৬৯৩ হেক্টর, মাঝারি নিচু জমি ৩ হাজার ৮৪০ হেক্টর, নিচু জমি ৮১৫ হেক্টর ও অতি নিচু জমি আছে ৩৮২ হেক্টর। এসব মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু, নিচু ও অতি নিচু জমিতে চাষ করা আমন আবাদের প্রায় সব এলাকার ধান গাছ কমবেশি পানিতে পড়ে গেছে এবং অনেক নিচু ও অতি নিচু খেত পানিতে ডুবে গেছে।

 

কৃষকরা জানান, অন্য যেকোন আবাদের তুলনায় শীতকালীন আগাম শাক সবজি চাষে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই তারা শীত কালীন আগাম শাক সবজি চাষ করেছিলেন। এছাড়া কেউ কেউ শাক সবজি চাষের জন্য জমি তৈরী করছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টিতে কৃষকের সব স্বপ্ন যেন পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিম মেহেদী জানান, চলমান বৃষ্টিতে কৃষকের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কি পরিমান জমির ধান গাছ পানিতে পড়ে গেছে ও কি পরিমাণ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে তা এখনো সঠিক ভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, কয়েক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু আজ কালের মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আর যেসব আমন ধানের ক্ষেতে পটাশ ও জৈব সার কম প্রয়োগ করা হয়, সে সব জমির ধান গাছ অপেক্ষাকৃত কম শক্ত থাকে বিধায় সামান্য বাতাস হলেই পড়ে যায়। তাই নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে পরিমিত পরিমাণে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। তার পরেও অনেক কৃষক তাদের পরামর্শকে আমলে না করে মনগড়া ভাবে সার প্রয়োগ করেন বলেই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তারা। তাছাড়া অনেক কৃষক উঁচু জাতের ধান রোপন করাতেও বাতাসে অনেক সময় ধান গাছ পড়ে যায়। তবে বর্তমানের বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাতে উপজেলায় আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে কোন প্রভাব পরবে না।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, যেসব জমি শীত কালীন শাক সবজি রোপনের জন্য তৈরী করা হয়েছিলো, বৃষ্টিতে আপাতত সেসব জমির জোঁ নষ্ট হলেও, বৃষ্টি থেমে গেলে অতি তাড়াতাড়ি জমির জোঁ এসে যাবে। আর যেসব জমিতে শাক সবজি গজিয়ে গেছে, সে সব জমির জন্য এই বৃষ্টি ক্ষতি করবে না, বরং ওই ফসলের উপকার হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিম মেহেদী। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ছুটির দিনেও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের মাঠে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

ফেঞ্চুগঞ্জের রত্না নদী ইজারা প্রদানের পায়তারা বন্ধের দাবী: স্মারকলিপি প্রদান

Follow for More!

নকলায় বৃষ্টিতে ডুবে গেছে কৃষি মাঠ: আমনে অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা! পিছালো আগাম শাক সবজির আবাদ

প্রকাশিত: ০৫:১৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
১৯

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:শেরপুরের নকলায় শুক্রবার মধ্যরাত হতে দুই দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষি আবাদী মাঠ। বৃষ্টির পাশাপাশি মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়ায় আমন আবাদসহ শীত কালীন শাক সবজির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে আমন ধান কাটার আগেই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক। এছাড়া জমির জোঁ নষ্ট হওয়ায় পিছিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে শীতকালীন আগাম শাক সবজির আবাদ।

 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঝড়ো হাওয়ায় পানিতে পড়ে গেছে ধানের ভিতর চাল হয়ে যাওয়া জমির ধান গাছ। তাছাড়া শীত কালীন শাক সবজির ক্ষেত ও শাক সবজির বীজ বপণের জন্য তৈরী করা জমিতে পানি জমে জমির জোঁ নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় সব কয়টা ইউনিয়নের নিচু এলাকার কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি জন জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ; হতাশায় পড়েছেন উপজেলার হাজারো কৃষিজীবী পরিবার।

 

শীত কালীন শাক সবজি চাষে ও উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন কৃষক। তারা জানান, উপজেলায় শাতধিক ফলজ বৃক্ষ উপড়ে পড়ে গেছে। রাস্তার ধারে অনেক পুকুর পাড়ে রোপন করা কলা গাছ ও বিভিন্ন ফলজ গাছ উপড়ে পড়ে যাওয়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

 

তথ্য মতে, উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি আছে ১৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর। তবে নীট ফসলী জমি রয়েছে ১৪ হাজার ৮১০ হেক্টর। এরমধ্যে উঁচু জমি আছে ৫ হাজার ১৪০ হেক্টর, মাঝারি উঁচু জমি ৪ হাজার ৬৯৩ হেক্টর, মাঝারি নিচু জমি ৩ হাজার ৮৪০ হেক্টর, নিচু জমি ৮১৫ হেক্টর ও অতি নিচু জমি আছে ৩৮২ হেক্টর। এসব মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু, নিচু ও অতি নিচু জমিতে চাষ করা আমন আবাদের প্রায় সব এলাকার ধান গাছ কমবেশি পানিতে পড়ে গেছে এবং অনেক নিচু ও অতি নিচু খেত পানিতে ডুবে গেছে।

 

কৃষকরা জানান, অন্য যেকোন আবাদের তুলনায় শীতকালীন আগাম শাক সবজি চাষে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই তারা শীত কালীন আগাম শাক সবজি চাষ করেছিলেন। এছাড়া কেউ কেউ শাক সবজি চাষের জন্য জমি তৈরী করছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টিতে কৃষকের সব স্বপ্ন যেন পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিম মেহেদী জানান, চলমান বৃষ্টিতে কৃষকের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কি পরিমান জমির ধান গাছ পানিতে পড়ে গেছে ও কি পরিমাণ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে তা এখনো সঠিক ভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, কয়েক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু আজ কালের মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আর যেসব আমন ধানের ক্ষেতে পটাশ ও জৈব সার কম প্রয়োগ করা হয়, সে সব জমির ধান গাছ অপেক্ষাকৃত কম শক্ত থাকে বিধায় সামান্য বাতাস হলেই পড়ে যায়। তাই নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে পরিমিত পরিমাণে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। তার পরেও অনেক কৃষক তাদের পরামর্শকে আমলে না করে মনগড়া ভাবে সার প্রয়োগ করেন বলেই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তারা। তাছাড়া অনেক কৃষক উঁচু জাতের ধান রোপন করাতেও বাতাসে অনেক সময় ধান গাছ পড়ে যায়। তবে বর্তমানের বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাতে উপজেলায় আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে কোন প্রভাব পরবে না।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, যেসব জমি শীত কালীন শাক সবজি রোপনের জন্য তৈরী করা হয়েছিলো, বৃষ্টিতে আপাতত সেসব জমির জোঁ নষ্ট হলেও, বৃষ্টি থেমে গেলে অতি তাড়াতাড়ি জমির জোঁ এসে যাবে। আর যেসব জমিতে শাক সবজি গজিয়ে গেছে, সে সব জমির জন্য এই বৃষ্টি ক্ষতি করবে না, বরং ওই ফসলের উপকার হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিম মেহেদী। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ছুটির দিনেও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের মাঠে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।