
‘সংঘাত, অনাহার, যুদ্ধ, গণহত্যা এসব দেখেও আমরা মানুষের দুর্ভোগের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছি’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খোন্দকার মোহাম্মদ তালহা। মানবিক মর্যাদা ও নৈতিকতার মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল পদক্ষেপেরও আহ্বান জানান তিনি।
স্বাধীনতা উত্তর ৫৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো বাংলাদেশি সভাপতি হিসেবে ইউনেস্কোর ৪৩তম সম্মেলনে তার প্রথম ভাষণে বিশ্ব সম্প্রদায়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানোপ্রযুক্তি এবং স্নায়ুবিজ্ঞানের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বিষয়ে আরও সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান খোন্দকার তালহা।
তিনি বলেন, ‘৮০ বছর পরেও ইউনেস্কোর মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাসঙ্গিক। কিন্তু ২০২৫ সালের বিশ্ব নতুন এবং জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি’। শান্তির সংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে ইউনেস্কোকে একটি পরিবর্তনকারী হিসেবেই দেখেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় খোন্দকার মোহাম্মদ তালহার সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি শাভকাত মিরজিয়োয়েভ, সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুসিচ এবং স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রপতি পিটার পেলেগ্রিনিসহ অন্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।
২০২১ সালে ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পান খন্দকার এম তালহা। এর পাশাপাশি ফ্রান্স, মোনাকো ও কোতদিভোয়ারের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বেও আছেন তিনি।৭ অক্টোবরের নির্বাচনে জাপানের বিপক্ষে জয়লাভের পর ইউনেস্কোর সর্বোচ্চ সংস্থা রাষ্ট্রদূত তালহাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের পক্ষে কাজ করা বহুপাক্ষিক এই সংস্থার সদস্যপদ লাভের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি সভাপতি।
বর্তমানে অস্থির ভূ-রাজনৈতিক আলোচনায় আলোকপাত করে খোন্দকার মোহাম্মদ তালহা বলেন, ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সমাজকে আরও খণ্ডিত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সমগ্র মানব জাতিকে ধ্বংস করার ঝুঁকি তৈরি করছে’।
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে নির্বাচিত হওয়ায় রাষ্ট্রদূত তালহাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তটিকে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক’। মাতৃভাষার প্রচার ও সংরক্ষণে বাংলাদেশের নেতৃত্বের কথাও স্মরণ করেন মহাপরিচালক।
ইউনেস্কোর সম্মেলনে বিদায়ী সভাপতি রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত সিমোনা মিরেলা মিকুলেস্কুও তার বক্তব্যে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। এটিকে ইউনেস্কো ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য রাষ্ট্রদূত তালহার বিশাল পেশাদারিত্বের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়ার নতুন সুযোগ হিসেবেও চিহ্নিত করেন তিনি। পরে রাষ্ট্রদূত তালহাকে সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করেন সিমোনা।
ইউনেস্কোর সাধারণ এই সম্মেলনের আরও ভূ-রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, ৪০ বছর পর ইউনেস্কো সচিবালয়ের বাইরে হচ্ছে এবারের সম্মেলনটি।
সম্মেলনে সাধারণ নীতি বিতর্কে সাধারণ সম্মেলনের কার্যপ্রণালী বিধির বিধি ৬৮ অনুসারে উপস্থিত বক্তাদের জাতীয় নীতি বিবৃতি ছয় মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষাকে রক্ষায় রাজপথে আন্দোলন হয় এবং পাকিস্তানি সরকার বাহিনীর গুলিতে সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেকে শহীদ দেন।
মায়ের ভাষায় কথা বলাতে বুকের তরতাজা রক্তে ঢেলে দেয়ার এমন বিরল দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। এজন্য ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে ফ্রান্সের প্যারিসে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা দিয়েছিল।
Channel Jainta News 24 

























