ঢাকা ০১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভূল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকের উপর হামলা 

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ০৯:৩১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • ৯ পড়া হয়েছে
১৩

নিজস্ব সংবাদদাতা ::

সিলেটের গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল বাজারে ছালেহা ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে এক গর্ভবতী মায়ের রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহতের স্বামী বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬নং দক্ষিণ রণীখাই ইউনিয়নের দরাকুল গ্রাম। নিহতের স্বামী নুরুজ্জামান জানান তার সহধর্মিণী সোনারা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যু হয় ছালেহা ক্লিনিকে । জানা যায় সোনারা বেগম গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের বড়ঘোসা গ্রামের মৃত জহির আলীর মেয়ে। এদিকে ভূল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার দুপুর ১২ টার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সংবাদকর্মী হচ্ছেন সিলেটের স্থানীয় দৈনিক জৈন্তাবার্তা প্রতিবেদক সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশাহ ও দৈনিক উত্তরপূর্ব প্রতিনিধি হারুন আহমদ।

হামলার শিকার হেলাল আহমদ বাদশাহ বলেন,  তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ কালে ছালেহা ক্লিনিক পরিচালনার অন্যতম সিন্ডিকেট সদস্য তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি (উত্তর পশ্চিম পাড়া) গ্রামের আব্দুর রব শিকদারের ছেলে ফজলুর রহমান হৃদয় অতর্কিত ভাবে হামলা চালায়। এসময় আমাদের মারধর করে এবং দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলার ঘটনা পরপরই সাংবাদিক নেতারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

 

ছালেহা ক্লিনিকে মারা যাওয়া সোনারা বেগমের স্বামী নুরুজ্জামান জানান, রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলের দিকে সোনারা বেগমের প্রসব বেদনা উঠে। স্থানীয়দের পরামর্শে বিকাল ৫ টার দিকে সোনারা বেগমকে ছালেহা ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ভর্তি করে দেখতে পান এই ক্লিনিকে এমবিবিএস কোন ডাক্তার নেই। রাত ৯ টার দিকে প্রসব বেদনা আরো বেশি হলে তিনি ক্লিনিক কতৃপক্ষের নিকট বারবার অনুরোধ করেন তাকে রিলিজ দিতে। যাতে রোগীকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেন। কিন্তু কতৃপক্ষ সায় না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় এই ক্লিনিকেই সোনারা মৃত্যু বরন করেন। ময়নাতদন্তসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে তিনি ছালেহা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ পথে যেতে চাননি তিনি। তিনি আল্লাহ তায়ালার উপর বিচার ছেড়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শাহাব উদ্দিন জানান, তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন এবং মৃত সোনারা বেগমের স্বামী তার স্ত্রীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছেন।

 

 

গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ছালেহা ক্লিনিকে একজন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় দুজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ক্লিনিক কতৃপক্ষের লোকজন তাদের সাথে অসদাচারন করে এবং তাদের অবরুদ্ধ রাখার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশের দুটি টিম পাঠাই। এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ সহ গোয়াইনঘাটে কর্মরত সাংবাদিকরা অফিসার ইনচার্জের সাথে বসে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সে পথেই আমরা হাটছি। উল্লেখ্য যে, গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারে অবৈধভাবে গড়ে উঠে এ ক্লিনিক। সরকারী অনুমোদন না থাকলেও চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেবার নামে এ ক্লিনিকে চলছে গলাকাটা অবৈধ রমরমা বাণিজ্য।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই এখানে এ ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। ক্লিনিক কতৃপক্ষ  ইচ্ছামতো নিয়ম-কানুন তৈরি করে বছরের পর বছর ধরে এ রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামাফিক ফি। হাতুড়ে টেকনিশিয়ানরা অনেক ক্ষেত্রেই দিচ্ছেন মনগড়া রিপোর্ট।

 

পর্যাপ্ত ডাক্তার ও মিডওয়াইফার এবং লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে একটা ক্লিনিক চলতে পারে এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার প্রতিবেদককে বলেন, গত কয়েক মাস পূর্বে জেলা থেকে পরিদর্শন করতে আসছিল। সে সময় তাদের ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম সন্তোষজনক ছিল। বর্তমানে চিকিৎসা সেবা প্রদানের অনুমতি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনো জানিনা। আগামীকাল ইউএনও সাহেবকে নিয়ে পরিদর্শনে যাবো। যাচাই করে দেখবো। যদি গরমিল পাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

দলের জন্য হিফজুরের অবদান চিরস্বরনীয় হয়ে থাকবে : মিফতাহ সিদ্দিকী

Follow for More!

ভূল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকের উপর হামলা 

প্রকাশিত: ০৯:৩১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
১৩

নিজস্ব সংবাদদাতা ::

সিলেটের গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল বাজারে ছালেহা ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে এক গর্ভবতী মায়ের রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহতের স্বামী বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬নং দক্ষিণ রণীখাই ইউনিয়নের দরাকুল গ্রাম। নিহতের স্বামী নুরুজ্জামান জানান তার সহধর্মিণী সোনারা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যু হয় ছালেহা ক্লিনিকে । জানা যায় সোনারা বেগম গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের বড়ঘোসা গ্রামের মৃত জহির আলীর মেয়ে। এদিকে ভূল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার দুপুর ১২ টার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সংবাদকর্মী হচ্ছেন সিলেটের স্থানীয় দৈনিক জৈন্তাবার্তা প্রতিবেদক সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশাহ ও দৈনিক উত্তরপূর্ব প্রতিনিধি হারুন আহমদ।

হামলার শিকার হেলাল আহমদ বাদশাহ বলেন,  তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ কালে ছালেহা ক্লিনিক পরিচালনার অন্যতম সিন্ডিকেট সদস্য তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি (উত্তর পশ্চিম পাড়া) গ্রামের আব্দুর রব শিকদারের ছেলে ফজলুর রহমান হৃদয় অতর্কিত ভাবে হামলা চালায়। এসময় আমাদের মারধর করে এবং দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলার ঘটনা পরপরই সাংবাদিক নেতারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

 

ছালেহা ক্লিনিকে মারা যাওয়া সোনারা বেগমের স্বামী নুরুজ্জামান জানান, রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলের দিকে সোনারা বেগমের প্রসব বেদনা উঠে। স্থানীয়দের পরামর্শে বিকাল ৫ টার দিকে সোনারা বেগমকে ছালেহা ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ভর্তি করে দেখতে পান এই ক্লিনিকে এমবিবিএস কোন ডাক্তার নেই। রাত ৯ টার দিকে প্রসব বেদনা আরো বেশি হলে তিনি ক্লিনিক কতৃপক্ষের নিকট বারবার অনুরোধ করেন তাকে রিলিজ দিতে। যাতে রোগীকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেন। কিন্তু কতৃপক্ষ সায় না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় এই ক্লিনিকেই সোনারা মৃত্যু বরন করেন। ময়নাতদন্তসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে তিনি ছালেহা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ পথে যেতে চাননি তিনি। তিনি আল্লাহ তায়ালার উপর বিচার ছেড়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শাহাব উদ্দিন জানান, তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন এবং মৃত সোনারা বেগমের স্বামী তার স্ত্রীর মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছেন।

 

 

গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ছালেহা ক্লিনিকে একজন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় দুজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ক্লিনিক কতৃপক্ষের লোকজন তাদের সাথে অসদাচারন করে এবং তাদের অবরুদ্ধ রাখার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশের দুটি টিম পাঠাই। এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ সহ গোয়াইনঘাটে কর্মরত সাংবাদিকরা অফিসার ইনচার্জের সাথে বসে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। সে পথেই আমরা হাটছি। উল্লেখ্য যে, গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারে অবৈধভাবে গড়ে উঠে এ ক্লিনিক। সরকারী অনুমোদন না থাকলেও চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেবার নামে এ ক্লিনিকে চলছে গলাকাটা অবৈধ রমরমা বাণিজ্য।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই এখানে এ ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে। ক্লিনিক কতৃপক্ষ  ইচ্ছামতো নিয়ম-কানুন তৈরি করে বছরের পর বছর ধরে এ রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামাফিক ফি। হাতুড়ে টেকনিশিয়ানরা অনেক ক্ষেত্রেই দিচ্ছেন মনগড়া রিপোর্ট।

 

পর্যাপ্ত ডাক্তার ও মিডওয়াইফার এবং লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে একটা ক্লিনিক চলতে পারে এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার প্রতিবেদককে বলেন, গত কয়েক মাস পূর্বে জেলা থেকে পরিদর্শন করতে আসছিল। সে সময় তাদের ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম সন্তোষজনক ছিল। বর্তমানে চিকিৎসা সেবা প্রদানের অনুমতি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনো জানিনা। আগামীকাল ইউএনও সাহেবকে নিয়ে পরিদর্শনে যাবো। যাচাই করে দেখবো। যদি গরমিল পাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।