ঢাকা ০১:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনা সাজায় ৩০ বছর কা রা ভো গ : অবশেষে মুক্ত হবিগঞ্জের কনু মিয়া

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ০১:৫৩:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
  • ৮ পড়া হয়েছে
১৩

লাখাই( হবিগঞ্জ)  প্রতিনিধি।

হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরলেন লাখাই এর কানু মিয়া । প্রায় তিন দশক পর মুক্ত আকাশ আর আলো বাতাস দেখছে। কনু মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার করাব ইউনিয়নের সিংহগ্রাম গ্রামে কানু মিয়া, মামলার বিচার হয়নি, সাজাও হয়নি। তারপরও কারাগারের অন্ধকারে কেটেছে ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন। অবশেষে ১৫ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার হবিগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন কনু মিয়া নামে এক ব্যক্তি।

 

জানা গেছে- যুবক কনু মিয়া ছিলেন মানসিক রোগী। ১৯৯৫ সালের ২৫ মে ঘুমের ঘুরে জন্মযাত্রী মা মেজেষ্টর বিবিকে কুদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন কনু মিয়া। পরে গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। পরের দিন ৩ লাইনের একটি স্বীকারুক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করেন কনু মিয়া। তারপর থেকে কনু মিয়ার জেল জীবন শুরু। এক দুই বছর নয় একাধারে ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন কেটেছে কারাগারে। প্রথমে ভাই স্বজনরা কনু মিয়াকে দেখতে কারাগারে গেলেও একটা সময় আর যাওয়া হয়নি। পরিবারের অনেক সদস্য ভুলেই গিয়েছেন কনু মিয়া জীবিত না মারা গেছেন। ৩০ বছরের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকে জানেনই না সিংহ গ্রাম গ্রামে মৃত চিনি মিয়ার এক ছেলে আছে, যার নাম কনু মিয়া, সেই কনু মিয়া এখনো জীবিত।

 

পরিবার আত্বীয় স্বজন যখন কনু মিয়াকে ভুলতে বসেছেন ঠিক সেই সময় এ বিষয়টি নজরে আসে হবিগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিনের। তিনি কনু মিয়ার আইনগত প্রতিকার পাওয়ার উদ্যোগ নেন। মেজেষ্টর বিবি হত্যা মামলার বাদী কনু মিয়ার ভাই মনু মিয়ার সন্ধান পান তিনি। একই সাথে মনু মিয়ার আরেক ভাই নাসু মিয়ার খোজ খবর নিয়ে তাদেরকে লিগ্যাল এইড অফিসে নিয়ে আসেন সিনিয়র সহকারী জজ মুহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন। কনু মিয়ার জামিনের জন্য সরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জেনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মনু মিয়া ও নাসু মিয়া। তারা কনু মিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

 

মানসিক রোগে আক্রান্ত কোনো আসামীর জামিনের বিষয়টি সচরাচর অন্যান্য আসামীর জামিনের বিষয়ের মতো নয়। হত্যা মামলার একমাত্র আসামী কনু মিয়া মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে বলে জানা যায়। মনসিক রোগে আক্রান্ত আসামীর জামিন মঞ্জুর হলে তার নিরাপত্তা, তার দ্বারা আর যাতে কেউ আক্রান্ত না হয় তার প্রাথমিক নিশ্চয়তা, খাদ্য বাসস্থানের নিশ্চয়তা, কোর্টের নির্দেশ মতো আসামীকে হাজির করা ইত্যাদি বিষয় সম্পৃক্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে লিগ্যাল এইড এর প্যানেলভূক্ত আইনজীবী এডভোকেট এম এ মজিদের সাথে কথা বলেন লিগ্যাল এইড অফিসার মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিন।

 

সার্বিক দিক বিবেচনায় গত ১৪ জুলাই হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজতী আসামী কনু মিয়ার জামিন আবেদন করেন লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এডভোকেট এম এ মজিদ। জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম আসামী কনু মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। আর এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান কনু মিয়া।

 

লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এম এ মজিদ জানান- দীর্ঘদিন পর হলেও জামিনে মুক্ত হয়েছেন কনু মিয়া। যা নিয়ে তার স্বজনরা উচ্ছসিত। জামিন পাওয়ার পর তার দুই ভাই তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছে।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রযুক্তির বাইরে নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে- ডা. শামীমুর রহমান

Follow for More!

বিনা সাজায় ৩০ বছর কা রা ভো গ : অবশেষে মুক্ত হবিগঞ্জের কনু মিয়া

প্রকাশিত: ০১:৫৩:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
১৩

লাখাই( হবিগঞ্জ)  প্রতিনিধি।

হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরলেন লাখাই এর কানু মিয়া । প্রায় তিন দশক পর মুক্ত আকাশ আর আলো বাতাস দেখছে। কনু মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার করাব ইউনিয়নের সিংহগ্রাম গ্রামে কানু মিয়া, মামলার বিচার হয়নি, সাজাও হয়নি। তারপরও কারাগারের অন্ধকারে কেটেছে ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন। অবশেষে ১৫ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার হবিগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন কনু মিয়া নামে এক ব্যক্তি।

 

জানা গেছে- যুবক কনু মিয়া ছিলেন মানসিক রোগী। ১৯৯৫ সালের ২৫ মে ঘুমের ঘুরে জন্মযাত্রী মা মেজেষ্টর বিবিকে কুদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন কনু মিয়া। পরে গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। পরের দিন ৩ লাইনের একটি স্বীকারুক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করেন কনু মিয়া। তারপর থেকে কনু মিয়ার জেল জীবন শুরু। এক দুই বছর নয় একাধারে ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন কেটেছে কারাগারে। প্রথমে ভাই স্বজনরা কনু মিয়াকে দেখতে কারাগারে গেলেও একটা সময় আর যাওয়া হয়নি। পরিবারের অনেক সদস্য ভুলেই গিয়েছেন কনু মিয়া জীবিত না মারা গেছেন। ৩০ বছরের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকে জানেনই না সিংহ গ্রাম গ্রামে মৃত চিনি মিয়ার এক ছেলে আছে, যার নাম কনু মিয়া, সেই কনু মিয়া এখনো জীবিত।

 

পরিবার আত্বীয় স্বজন যখন কনু মিয়াকে ভুলতে বসেছেন ঠিক সেই সময় এ বিষয়টি নজরে আসে হবিগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিনের। তিনি কনু মিয়ার আইনগত প্রতিকার পাওয়ার উদ্যোগ নেন। মেজেষ্টর বিবি হত্যা মামলার বাদী কনু মিয়ার ভাই মনু মিয়ার সন্ধান পান তিনি। একই সাথে মনু মিয়ার আরেক ভাই নাসু মিয়ার খোজ খবর নিয়ে তাদেরকে লিগ্যাল এইড অফিসে নিয়ে আসেন সিনিয়র সহকারী জজ মুহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন। কনু মিয়ার জামিনের জন্য সরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জেনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন মনু মিয়া ও নাসু মিয়া। তারা কনু মিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

 

মানসিক রোগে আক্রান্ত কোনো আসামীর জামিনের বিষয়টি সচরাচর অন্যান্য আসামীর জামিনের বিষয়ের মতো নয়। হত্যা মামলার একমাত্র আসামী কনু মিয়া মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে বলে জানা যায়। মনসিক রোগে আক্রান্ত আসামীর জামিন মঞ্জুর হলে তার নিরাপত্তা, তার দ্বারা আর যাতে কেউ আক্রান্ত না হয় তার প্রাথমিক নিশ্চয়তা, খাদ্য বাসস্থানের নিশ্চয়তা, কোর্টের নির্দেশ মতো আসামীকে হাজির করা ইত্যাদি বিষয় সম্পৃক্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে লিগ্যাল এইড এর প্যানেলভূক্ত আইনজীবী এডভোকেট এম এ মজিদের সাথে কথা বলেন লিগ্যাল এইড অফিসার মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিন।

 

সার্বিক দিক বিবেচনায় গত ১৪ জুলাই হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজতী আসামী কনু মিয়ার জামিন আবেদন করেন লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এডভোকেট এম এ মজিদ। জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম আসামী কনু মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। আর এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান কনু মিয়া।

 

লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এম এ মজিদ জানান- দীর্ঘদিন পর হলেও জামিনে মুক্ত হয়েছেন কনু মিয়া। যা নিয়ে তার স্বজনরা উচ্ছসিত। জামিন পাওয়ার পর তার দুই ভাই তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছে।