ঢাকা ০৬:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দর্জির কাজ করেও জিপিএ ৫ পেয়েছেন শাল্লার অর্পা

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ০৪:৫২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • ৯ পড়া হয়েছে

Oplus_131072

১৭

হাবিবুর রহমান হাবিব, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) থেকেঃ

সুনামগঞ্জের শাল্লার প্রত্যন্ত এক গ্রামে, যেখানে বিদ্যুতের আলো ফোঁটা ফোঁটা আসে, আর ইন্টারনেটের সংকেত দুলে ওঠে বাতাসে—সেই অন্ধকারের মাঝেই আলো হয়ে জ্বলে উঠেছে একটি নাম অর্পা তালুকদার।

 

১৫ বছরের এই কিশোরী দর্জির কাজ করেও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোবিন্দ চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। তবে এই ফল শুধু একরাশ নম্বর নয়—এটি একটি ভাঙা সংসারের বুকচিরে এগিয়ে আসা সাহসী কন্যার বিজয়পত্র।

 

অর্পা তালুকদারের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ৩নং বাহাড়া ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে।২০১৬ সালে অর্পার বাবা মারা গেলেও হাল ছাড়েনি তার মা অলি তালুকদার।

 

অর্পা তখন অনেক ছোট। এক নিমিষে পাল্টে যায় তার শৈশব। খাবারের প্লেট ফাঁকা, মায়ের চোখে ক্লান্তি, ছোট ভাইয়ের চোখে প্রশ্ন—এই দারিদ্র্যের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মেয়েটি একদিন চুপচাপ বলেছিল- ‘মা, আমি হারবো না। বই ছাড়বো না।’ সেদিন থেকে শুরু হয় অর্পার যুদ্ধ।

 

বয়স যখন খেলা করার, তখন অর্পা হাতে নেয় সেলাই মেশিন। শাড়ি-চাপানো ব্লাউজ সেলাই করে দিনে যে টাকা পেতো, সেই টাকা দিয়েই মেটায় খাতা-কলমের খরচ। রাত হলে ঘরের কোণে হারিকেন জ্বলে—আর অর্পা মুখ গুঁজে দেয় গণিত ও জীববিজ্ঞানে।

 

নিঃশব্দে অর্পা বলেন,বাবা মারা গিয়েছে সেই ২০১৬ সালেই। স্কুলে যেতাম খালি পেটে। কিন্তু পড়া ছাড়িনি। ক্লাস মিস করিনি। চোখে ভাসছে অশ্রু, তবু মুখে একরাশ অঙ্গীকার—‘আমি ডাক্তার হতে চাই। বাবার স্বপ্ন ছিল। এখন মায়ের জন্য চাই… একটা সুযোগ, শুধু একটা সুযোগ।’

 

তার শিক্ষক সজল চন্দ্র সরকার বলেন, অর্পার মতো ছাত্রী হাজারে এক। দারিদ্র্য তাকে আটকে রাখতে পারেনি। সে আমাদের স্কুলের গর্ব।

 

অর্পার প্রাইভেট টিউটর ও শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সীমান্ত তালুকদার সুমন বলেন, দর্জির কাজও করেছে নিজের পড়াশোনাও সামলিছে অর্পা। ওদের মতো পরিশ্রমীরা সুযোগ সুবিধা পেলে বিশ্বজয় করবে।  অর্পা গোল্ডেন A+ পাওয়ায় আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি৷ তার মত সংগ্রামী জীবন খুব কম মানুষের হয়৷ একটু সুযোগ সুবিধা পেলে বিশ্বজয় করবে অর্পা। তার একটা ছোট ভাই আছে যার নাম অর্ঘ্য । সে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। সেও অনেক মেধাবী। তিনি বলেন আমরা অর্পার পাশে সবসময় থাকবো।

 

অর্পর মা অলি রানী তালুকদার কাঁপা গলায় বলেন, রান্না ঘরে আজও কষ্ট, কিন্তু মেয়ের চোখে আলো। জানি না, কলেজে ভর্তি করাতে পারবো কিনা! অর্পার গল্প শুধু তার নিজের নয়—এটি এই দেশের হাজারো অবহেলিত, অব্যক্ত স্বপ্নের মুখ। যে স্বপ্ন এখনো থমকে আছে বৃত্তির অপেক্ষায়, একজোড়া বইয়ের অভাবে, অথবা কেবল একটি মানবিক হাতের ছোঁয়ায়।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, দর্জির কাজ করে একটা মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে এটা খুবই আনন্দ ও গর্বের বিষয়। আমি তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি। বিষয়টি যেহেতু আমার নলেজে দিয়েছেন, খোঁজখবর নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় আমরা তা করবো।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

ধনী দেশগুলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে— মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

Follow for More!

দর্জির কাজ করেও জিপিএ ৫ পেয়েছেন শাল্লার অর্পা

প্রকাশিত: ০৪:৫২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
১৭

হাবিবুর রহমান হাবিব, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) থেকেঃ

সুনামগঞ্জের শাল্লার প্রত্যন্ত এক গ্রামে, যেখানে বিদ্যুতের আলো ফোঁটা ফোঁটা আসে, আর ইন্টারনেটের সংকেত দুলে ওঠে বাতাসে—সেই অন্ধকারের মাঝেই আলো হয়ে জ্বলে উঠেছে একটি নাম অর্পা তালুকদার।

 

১৫ বছরের এই কিশোরী দর্জির কাজ করেও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোবিন্দ চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। তবে এই ফল শুধু একরাশ নম্বর নয়—এটি একটি ভাঙা সংসারের বুকচিরে এগিয়ে আসা সাহসী কন্যার বিজয়পত্র।

 

অর্পা তালুকদারের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ৩নং বাহাড়া ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে।২০১৬ সালে অর্পার বাবা মারা গেলেও হাল ছাড়েনি তার মা অলি তালুকদার।

 

অর্পা তখন অনেক ছোট। এক নিমিষে পাল্টে যায় তার শৈশব। খাবারের প্লেট ফাঁকা, মায়ের চোখে ক্লান্তি, ছোট ভাইয়ের চোখে প্রশ্ন—এই দারিদ্র্যের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মেয়েটি একদিন চুপচাপ বলেছিল- ‘মা, আমি হারবো না। বই ছাড়বো না।’ সেদিন থেকে শুরু হয় অর্পার যুদ্ধ।

 

বয়স যখন খেলা করার, তখন অর্পা হাতে নেয় সেলাই মেশিন। শাড়ি-চাপানো ব্লাউজ সেলাই করে দিনে যে টাকা পেতো, সেই টাকা দিয়েই মেটায় খাতা-কলমের খরচ। রাত হলে ঘরের কোণে হারিকেন জ্বলে—আর অর্পা মুখ গুঁজে দেয় গণিত ও জীববিজ্ঞানে।

 

নিঃশব্দে অর্পা বলেন,বাবা মারা গিয়েছে সেই ২০১৬ সালেই। স্কুলে যেতাম খালি পেটে। কিন্তু পড়া ছাড়িনি। ক্লাস মিস করিনি। চোখে ভাসছে অশ্রু, তবু মুখে একরাশ অঙ্গীকার—‘আমি ডাক্তার হতে চাই। বাবার স্বপ্ন ছিল। এখন মায়ের জন্য চাই… একটা সুযোগ, শুধু একটা সুযোগ।’

 

তার শিক্ষক সজল চন্দ্র সরকার বলেন, অর্পার মতো ছাত্রী হাজারে এক। দারিদ্র্য তাকে আটকে রাখতে পারেনি। সে আমাদের স্কুলের গর্ব।

 

অর্পার প্রাইভেট টিউটর ও শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সীমান্ত তালুকদার সুমন বলেন, দর্জির কাজও করেছে নিজের পড়াশোনাও সামলিছে অর্পা। ওদের মতো পরিশ্রমীরা সুযোগ সুবিধা পেলে বিশ্বজয় করবে।  অর্পা গোল্ডেন A+ পাওয়ায় আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি৷ তার মত সংগ্রামী জীবন খুব কম মানুষের হয়৷ একটু সুযোগ সুবিধা পেলে বিশ্বজয় করবে অর্পা। তার একটা ছোট ভাই আছে যার নাম অর্ঘ্য । সে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। সেও অনেক মেধাবী। তিনি বলেন আমরা অর্পার পাশে সবসময় থাকবো।

 

অর্পর মা অলি রানী তালুকদার কাঁপা গলায় বলেন, রান্না ঘরে আজও কষ্ট, কিন্তু মেয়ের চোখে আলো। জানি না, কলেজে ভর্তি করাতে পারবো কিনা! অর্পার গল্প শুধু তার নিজের নয়—এটি এই দেশের হাজারো অবহেলিত, অব্যক্ত স্বপ্নের মুখ। যে স্বপ্ন এখনো থমকে আছে বৃত্তির অপেক্ষায়, একজোড়া বইয়ের অভাবে, অথবা কেবল একটি মানবিক হাতের ছোঁয়ায়।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, দর্জির কাজ করে একটা মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে এটা খুবই আনন্দ ও গর্বের বিষয়। আমি তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি। বিষয়টি যেহেতু আমার নলেজে দিয়েছেন, খোঁজখবর নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় আমরা তা করবো।