ঢাকা ০৯:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিঃশব্দ সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি: মুরাদ হাসানের জীবনযুদ্ধ

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ০৬:০৩:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
  • ১২ পড়া হয়েছে
১৪

তরুণ সমাজকর্মী মুরাদ হাসানের গল্প :: সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নিভৃত পল্লী হেমু তিনপাড়া, জৈন্তাপুর এ যেন প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা এক নির্জন গ্রাম। এখানেই সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে জন্ম নেন মুরাদ হাসান। ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি, হিমেল এক সকালে তাঁর আগমন ঘটে এই পৃথিবীতে।

 

শৈশব কেটেছে ধুলোমাটি ও আন্তরিকতার সঙ্গে। স্বপ্ন ছিল বিস্তৃত, কিন্তু বাস্তবতা ছিল কঠিন। ১৯৯৫ সালে হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন চঞ্চল ও মেধাবী। এরপর পঞ্চম শ্রেণি পেরিয়ে ভর্তি হন হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে।

 

তবে তাঁর জীবনের পথ সহজ ছিল না। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব তাঁর কাঁধে আসে অল্প বয়সেই। কলেজে পড়ার সময়েই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবিকার তাগিদে নামেন কর্মজীবনে। তখনই পরিচয় ঘটে বিলাল আহমদ নামের এক মহৎপ্রাণ ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি মুরাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

 

২০০৭ সালে জাফলংয়ের একটি স্টোন ক্রাশারে ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পান। সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফলে অল্প সময়েই প্রতিষ্ঠানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। কর্মসূত্রে তাঁর সঙ্গে গড়ে ওঠে নয়াবাজার স্টক ইয়ার্ডসহ দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংযোগ।

 

২০১০ সালের ১১ জুলাই, তিনি সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালে রিপোর্ট ডেলিভারি বিভাগে যোগ দেন। যদিও দায়িত্ব ছিল বিকেলবেলা, সকালগুলো কাটত গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধানে। পাশাপাশি চলত সাহিত্যচর্চা, সিলেটের ডাক’ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় নিয়মিত লিখতেন কবিতা।

 

তবে মেধাবী মানুষদের জীবনে রাজনীতির ছায়াও পড়ে কখনো কখনো। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাঁকে দেশত্যাগে বাধ্য হতে হয় এবং দুই বছর আত্মগোপনে কাটান।

 

২০১৮ সালে দেশে ফিরে তিনি যোগ দেন সিলেটের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ‘হলি আর্থ মাল্টিপারপাস সোসাইটি’তে প্রধান ম্যানেজমেন্ট পদে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে সেখানে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি।

 

২০২১ সালে মা’কে হারানোর পর জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তবু থেমে যাননি বরং ভাই-বোন, সন্তানদের পড়াশোনা, অসুস্থ বাবার সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গ করেন।

 

২০২২ সালে চাচাতো ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত ‘হাসান ফিডঘর’-এ আবার কর্মজীবনে ফেরেন, হরিপুর স্কুল মার্কেট শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

 

আজকের মুরাদ হাসান কেবল একজন কর্মী নন তিনি একজন কবি, সাংবাদিক এবং সংগ্রামী মানুষ। কৃষিকাজ, সংবাদ লেখা, কবিতা রচনা ও পারিবারিক দায়িত্ব সবকিছু সমান্তরালে বহন করে চলেছেন নিঃশব্দে, নিরলসভাবে।

 

তাঁর জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই অসংখ্য মানুষকে, যারা আড়ালে থেকে প্রতিদিন সমাজের ভার বইছেন। মুরাদ হাসান যেন তাঁদেরই প্রতিচ্ছবি নির্বাক সংগ্রাম, দায়িত্ববোধ এবং আত্মত্যাগের এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবনচর্চা প্রমাণ করে জয় মানে শুধু বিজয় নয়, জয় মানে অবিচল থাকা, নীরব থেকে সামনে এগিয়ে চলা।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন দিবস উদযাপিত: সমন্বিত পুনর্বাসনে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা

Follow for More!

নিঃশব্দ সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি: মুরাদ হাসানের জীবনযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:০৩:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
১৪

তরুণ সমাজকর্মী মুরাদ হাসানের গল্প :: সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নিভৃত পল্লী হেমু তিনপাড়া, জৈন্তাপুর এ যেন প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা এক নির্জন গ্রাম। এখানেই সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে জন্ম নেন মুরাদ হাসান। ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি, হিমেল এক সকালে তাঁর আগমন ঘটে এই পৃথিবীতে।

 

শৈশব কেটেছে ধুলোমাটি ও আন্তরিকতার সঙ্গে। স্বপ্ন ছিল বিস্তৃত, কিন্তু বাস্তবতা ছিল কঠিন। ১৯৯৫ সালে হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন চঞ্চল ও মেধাবী। এরপর পঞ্চম শ্রেণি পেরিয়ে ভর্তি হন হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে।

 

তবে তাঁর জীবনের পথ সহজ ছিল না। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব তাঁর কাঁধে আসে অল্প বয়সেই। কলেজে পড়ার সময়েই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবিকার তাগিদে নামেন কর্মজীবনে। তখনই পরিচয় ঘটে বিলাল আহমদ নামের এক মহৎপ্রাণ ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি মুরাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

 

২০০৭ সালে জাফলংয়ের একটি স্টোন ক্রাশারে ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পান। সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফলে অল্প সময়েই প্রতিষ্ঠানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। কর্মসূত্রে তাঁর সঙ্গে গড়ে ওঠে নয়াবাজার স্টক ইয়ার্ডসহ দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংযোগ।

 

২০১০ সালের ১১ জুলাই, তিনি সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালে রিপোর্ট ডেলিভারি বিভাগে যোগ দেন। যদিও দায়িত্ব ছিল বিকেলবেলা, সকালগুলো কাটত গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধানে। পাশাপাশি চলত সাহিত্যচর্চা, সিলেটের ডাক’ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় নিয়মিত লিখতেন কবিতা।

 

তবে মেধাবী মানুষদের জীবনে রাজনীতির ছায়াও পড়ে কখনো কখনো। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাঁকে দেশত্যাগে বাধ্য হতে হয় এবং দুই বছর আত্মগোপনে কাটান।

 

২০১৮ সালে দেশে ফিরে তিনি যোগ দেন সিলেটের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ‘হলি আর্থ মাল্টিপারপাস সোসাইটি’তে প্রধান ম্যানেজমেন্ট পদে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে সেখানে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি।

 

২০২১ সালে মা’কে হারানোর পর জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তবু থেমে যাননি বরং ভাই-বোন, সন্তানদের পড়াশোনা, অসুস্থ বাবার সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গ করেন।

 

২০২২ সালে চাচাতো ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত ‘হাসান ফিডঘর’-এ আবার কর্মজীবনে ফেরেন, হরিপুর স্কুল মার্কেট শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

 

আজকের মুরাদ হাসান কেবল একজন কর্মী নন তিনি একজন কবি, সাংবাদিক এবং সংগ্রামী মানুষ। কৃষিকাজ, সংবাদ লেখা, কবিতা রচনা ও পারিবারিক দায়িত্ব সবকিছু সমান্তরালে বহন করে চলেছেন নিঃশব্দে, নিরলসভাবে।

 

তাঁর জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই অসংখ্য মানুষকে, যারা আড়ালে থেকে প্রতিদিন সমাজের ভার বইছেন। মুরাদ হাসান যেন তাঁদেরই প্রতিচ্ছবি নির্বাক সংগ্রাম, দায়িত্ববোধ এবং আত্মত্যাগের এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবনচর্চা প্রমাণ করে জয় মানে শুধু বিজয় নয়, জয় মানে অবিচল থাকা, নীরব থেকে সামনে এগিয়ে চলা।