ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই বিদায় নিলেন মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরী

  • Channel Jainta News 24
  • প্রকাশিত: ০৭:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • ৮ পড়া হয়েছে
১৫

 নতুন জায়গার অনুমতি না পেয়ে স্বামীর কবরে দাফন

অনলাইন ডেস্ক:

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্ণহীন আনুষ্ঠানিকতায় শেষ বিদায় নিলেন মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, সাবেক সংসদ উপনেতা ও মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার রমনায় নিজ বাসায় প্রথম এবং দুপুরে গুলশানের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে (আজাদ মসজিদ) দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকেলে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্বামী বজলুর রহমানের কবরে তাকে দাফন করা হয়।

Oplus_131072

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত এই রাজনীতিক বুধবার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

 

তবে বিদায় বেলায় এই মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মতিয়া চৌধুরীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় জানাজায় অংশ নেওয়া দলীয় (আওয়ামী লীগ) নেতাকর্মীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। দলের শীর্ষ নেতাদের কাউকে জানাজায় দেখা যায়নি।

 

বৃহস্পতিবার সকালে তার মরদেহ রাজধানীর রমনা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের বাসার সামনে নিয়ে যাওয়া হলে ভক্ত, অনুসারী ও স্বজনরা সেখানে ভিড় করেন। সেখানে জানাজার আগে আওয়ামী লীগ, মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী, দৈনিক ‘সংবাদ’ পরিবারের পক্ষ থেকে মতিয়া চৌধুরীর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।

 

দুপুরে জোহরের নামাজ শেষে গুলশানের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে (আজাদ মসজিদ) আরেক দফা জানাজা হয় মতিয়া চৌধুরীর। নামাজ শেষে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিবার, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, দৈনিক ‘সংবাদ’ পরিবার, মণি সিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী’সহ পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াত এই রাজনীতিকের কফিনে।

 

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ‘সংবাদ’ সম্পাদক ও প্রকাশক আলতামাশ কবির, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ব্যারিস্টার নিহাদ কবির ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ূন, অভিনেত্রী সারা যাকের, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ অনেকেই মতিয়া চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

 

পরে মতিয়া চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে বিকেলে স্বামীর কবরে তাকে দাফন করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, ‘সংবাদ’ পরিবার, বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন এবং বেশ কিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে মতিয়া চৌধুরীর কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

 

মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে কবরের জন্য একটি নতুন প্লট চেয়েছিলাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে অনুমতি না পেলে প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অনুমতি পাইনি। পরে তার স্বামীর (সাংবাদিক বজলুর রহমান) কবরে তাকে দাফন করা হয়েছে।’

 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-সিপিবিসহ গেরিলা বাহিনীর যারা যুদ্ধ করেছেন, তাদের মধ্যে ২৩ শ’র মত তালিকাভুক্ত হয়েছেন। সেখানে মতিয়া চৌধুরী তো নেতৃত্বে ছিলেন।’

 

মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপা তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখানে এসে প্রথমে গার্ড অব অনারের খুব তোড়জোড় দেখলাম, পরে আর কেউ আসেনি। আমরা যোগাযোগ করার পরে বলল উনার নাম তো পিরোজপুরে, তার পরে আর কেউ এল না।’

 

এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি রাকিব-উল-হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তো গতকালও একজনকে গার্ড অব অনার দিয়েছি। আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তো অবশ্যই দিই। উনার বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি।’

 

শেরপুর-২ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তাকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 

 

১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে মতিয়া চৌধুরীর জন্ম। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে মতিয়ার বিয়ে হয়। বজলুর রহমান আমৃত্যু সংবাদ-এর সম্পাদক ছিলেন।

 

ইডেন কলেজে পড়ার সময় বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে জড়ান মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন।

 

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা ছিল মতিয়া চৌধুরীর। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তাকে বলা হত ‘অগ্নিকন্যা’। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন মতিয়া। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে মতিয়া যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক সময় তাকে দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়।

 

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। জেলজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি।

 

রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে সারাজীবনই সাধারণ বেশভূষা আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।

ট্যাগ:

কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনি কমেন্ট করতে ইচ্ছুক?

সাংবাদিকদের তথ্য
ডেস্ক নিউজ

ডেস্ক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন দিবস উদযাপিত: সমন্বিত পুনর্বাসনে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা

Follow for More!

রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই বিদায় নিলেন মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৭:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
১৫

 নতুন জায়গার অনুমতি না পেয়ে স্বামীর কবরে দাফন

অনলাইন ডেস্ক:

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্ণহীন আনুষ্ঠানিকতায় শেষ বিদায় নিলেন মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, সাবেক সংসদ উপনেতা ও মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার রমনায় নিজ বাসায় প্রথম এবং দুপুরে গুলশানের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে (আজাদ মসজিদ) দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকেলে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্বামী বজলুর রহমানের কবরে তাকে দাফন করা হয়।

Oplus_131072

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত এই রাজনীতিক বুধবার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

 

তবে বিদায় বেলায় এই মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মতিয়া চৌধুরীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় জানাজায় অংশ নেওয়া দলীয় (আওয়ামী লীগ) নেতাকর্মীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। দলের শীর্ষ নেতাদের কাউকে জানাজায় দেখা যায়নি।

 

বৃহস্পতিবার সকালে তার মরদেহ রাজধানীর রমনা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের বাসার সামনে নিয়ে যাওয়া হলে ভক্ত, অনুসারী ও স্বজনরা সেখানে ভিড় করেন। সেখানে জানাজার আগে আওয়ামী লীগ, মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী, দৈনিক ‘সংবাদ’ পরিবারের পক্ষ থেকে মতিয়া চৌধুরীর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।

 

দুপুরে জোহরের নামাজ শেষে গুলশানের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে (আজাদ মসজিদ) আরেক দফা জানাজা হয় মতিয়া চৌধুরীর। নামাজ শেষে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিবার, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, দৈনিক ‘সংবাদ’ পরিবার, মণি সিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী’সহ পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াত এই রাজনীতিকের কফিনে।

 

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ‘সংবাদ’ সম্পাদক ও প্রকাশক আলতামাশ কবির, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ব্যারিস্টার নিহাদ কবির ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ূন, অভিনেত্রী সারা যাকের, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ অনেকেই মতিয়া চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

 

পরে মতিয়া চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে বিকেলে স্বামীর কবরে তাকে দাফন করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, ‘সংবাদ’ পরিবার, বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন এবং বেশ কিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে মতিয়া চৌধুরীর কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

 

মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে কবরের জন্য একটি নতুন প্লট চেয়েছিলাম। কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে অনুমতি না পেলে প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অনুমতি পাইনি। পরে তার স্বামীর (সাংবাদিক বজলুর রহমান) কবরে তাকে দাফন করা হয়েছে।’

 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-সিপিবিসহ গেরিলা বাহিনীর যারা যুদ্ধ করেছেন, তাদের মধ্যে ২৩ শ’র মত তালিকাভুক্ত হয়েছেন। সেখানে মতিয়া চৌধুরী তো নেতৃত্বে ছিলেন।’

 

মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপা তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখানে এসে প্রথমে গার্ড অব অনারের খুব তোড়জোড় দেখলাম, পরে আর কেউ আসেনি। আমরা যোগাযোগ করার পরে বলল উনার নাম তো পিরোজপুরে, তার পরে আর কেউ এল না।’

 

এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি রাকিব-উল-হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তো গতকালও একজনকে গার্ড অব অনার দিয়েছি। আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তো অবশ্যই দিই। উনার বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি।’

 

শেরপুর-২ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তাকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 

 

১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে মতিয়া চৌধুরীর জন্ম। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে মতিয়ার বিয়ে হয়। বজলুর রহমান আমৃত্যু সংবাদ-এর সম্পাদক ছিলেন।

 

ইডেন কলেজে পড়ার সময় বাম ধারার ছাত্র রাজনীতিতে জড়ান মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন।

 

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা ছিল মতিয়া চৌধুরীর। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তাকে বলা হত ‘অগ্নিকন্যা’। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন মতিয়া। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে মতিয়া যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক সময় তাকে দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়।

 

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। জেলজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি।

 

রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে সারাজীবনই সাধারণ বেশভূষা আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।